বিপদের বন্ধু-দুর্যোগ ব্যাংক

সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল
উপকূলীয় নারীরা পারিপারিক পর্যায়ে দুর্যোগের শক্তি হিসেবে ব্যবহার করছেন দুর্যোগ ব্যাংক। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলা করে টিকে আছে এই উপকূলের নানা শ্রেণী ও পেশার মানুষ। দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকুলীয় অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠী। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে তাৎক্ষণিক আংশিক আর্থিক নিরাপত্তার লক্ষ্যে এই দুর্যোগ বা মাটির ব্যাংক গুলো ব্যবহার করছেন নারীরা।


সাতক্ষীরা জেলার উপকূলীয় শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় পরিবেশ প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত ১৬০০ পরিবার নিয়ে কাজ করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৮০টি সিএস দল তৈরি হয়েছে। দলগুলোর সাথে ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পারিবারিক পর্যায়ে তৈরি হয় দুর্যোগ/ মাটির ব্যাংক। বারসিক থেকে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করা হয় এবং সিএসও সদস্যদের সাথে আলোচনার প্রেক্ষিতে তারা প্রতিটি সদস্যের বাড়িতে একটি করে দুর্যোগ ব্যাংক তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এভাবেই ১৬০০ বাড়িতেই একটি করে দুর্যোগ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ব্যাংকগুলো সদস্যরা নিজেরা স্থানীয় বাজার থেকে ক্রয় করে। এখানে পরিবারের সকল সদস্যরা বাড়তি/ খরচের অতিরিক্ত কিছু পয়সা বা টাকা এই ব্যাংকে সঞ্চয় জমা রাখেন। দিনের পর দিন এভাবে ব্যাংকের সঞ্চয় বাড়তে থাকে। যেটা তাদের এক সময়ের বিপদের বন্ধু হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন মিটে যায়।


এই প্রসঙ্গে সিএসও সদস্য যমুনা রানী বলেন, “মাঝে মধ্যে আমাদের হাতে কিছু খুচরা টাকা পয়সা চলে আসে, এইটা অনেক সময় খরচ করে ফেলতাম এখন এটা আমাদের মাটির ব্যাংকে রাখি। একসময় এখানে বড় অংকের টাকা তৈরি হয়ে যায়। আমাদের দলের সবার বাড়িতে একটি করে এই ব্যাংক রয়েছে। ”
সিএসও সদস্য স্বপ্না রানী জানান, “তিলে তিলে আমাদের দুর্যোগ ব্যাংকের টাকা বাড়তে থাকে। যখন কোন বিপদ বা দুর্যোগ আসে তখন এটা থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সুষম মিটে যায়।”
বারসিক পরিবেশ প্রকল্পের প্রতিটি সিএসও সদস্যদের বাড়িতে একটি করে দুর্যোগ ব্যাংক দেখা যায়। যেখানে প্রত্যেকেই নিয়মিতভাবে সঞ্চয় রাখছেন বিপদ/ দুর্যোগকালীন উত্তরণের জন্য।


উল্লেখ্য, বেসরকারী গবেষণা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বারসিক‘র উদ্যোগে এবং নেটজ-পার্টনারশিপ ফর ডেভেলমেন্ট এ্যান্ড জাস্টিস’র সহযোগিতায় বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা শক্তিশালী করণ (পরিবেশ) প্রকল্প এর আওতায় সিএসও সদস্যগুলোর একদিকে পারিপারিক আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে তেমনি দুর্যোগ সক্ষমতার আলোকে সঞ্চয়ী মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা কিনা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।

happy wheels 2

Comments