অচাষকৃত উদ্ভিদবৈচিত্র্য সংরক্ষণ করি
সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল
অচাষকৃত শাকপাতা, লতা, গুল্ম ঔষধি উদ্ভিদবৈচিত্র্যই গ্রামীন জনপদের পুষ্টির অন্যতম উৎস। এই পুষ্টি চাহিদা পূরণে শুধু শুধু প্রকল্প আর কর্মসূচি নয়, এসব উদ্ভিদ সংরক্ষণ উদ্যোগই নিশ্চিত করবে গ্রামীণ জনপদের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা। তেমনই একটি প্রতিবেশ উপযোগি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ধূমঘাট শাপলা নারী উন্নয়ন সংগঠন, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদ ও বারসিক। অচাষকৃত উদ্ভিদবৈচিত্র্য সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও সমৃদ্ধকরণে তারা সমন্বিত উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন একটি প্রদর্শনী প্লট।
উপকূলীয় সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ৯নং বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদ ও ধূমঘাট শাপলা নারী উন্নয়ন সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে ও বারসিক’র সহযোগিতায় পরিষদ আঙিনায় গড়ে তোলা প্রদশর্নী প্লটে আদাবরুন/বিলশাক, তেলাকচু, ঘুমশাক, কলমীশাক, গাদামনি শাক, হেলাঞ্চ, মাটিফোড়া শাক, খুদকুড়ো, দুধশাক সেঞ্চি শাক, ঘোড়া সেঞ্চি, কাটানটি, বউনুটে, নুনেশাক, গিমে শাক, থানকুনি, কালকচু ও পেপুলসহ প্রায় ২০ প্রজাতির কুড়িয়ে পাওয়া সবিজ স্থান পেয়েছে।
ধুমঘাট শাপলা নারী উন্নয়ন সংগঠনের সদস্য ও স্থানীয় কৃষক-কৃষাণীরা ইউনিয়ন পরিষদের বাগানের মধ্যে চারপাশে ইট দিয়ে ২২টি দৃশ্যমান প্লট প্রস্তুত করেন। তাতে ভার্মি কম্পোষ্ট সার ব্যবহার শেষে প্রতিটি প্লটে আলাদা আলাদা সবিজগুলো রোপণ করেন। প্রতিটি প্লটে সে সবজিগুলো রোপণ করা হয়েছে তাতে নেমপ্লেট ব্যবহার করায় সুসজ্জিত একটি পরিদর্শন প্লটে রূপ নিয়েছে। পরিদর্শন প্লট প্রস্তুতকালে স্থানীয় নারী পুরুষেরা উক্ত কাজের প্রশংসা করে বলেন, ‘এসকল উদ্ভিদসমূহ আমাদের এলাকায় আগে প্রচুর পরিমাণে ছিল। এখানে একসাথে দেখে আমাদের খুব ভালো লাগছে। এখান থেকে আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদগুলো টিকে থাকবে।’ অচাষকৃত উদ্ভিদবৈচিত্র্য সম্পর্কে ইউপি চেয়ারম্যান বাবু ভবতোষ কুমার মন্ডল বলেন, ‘এই মূল্যবান অচাষকৃত উদ্ভিদবৈচিত্র্যসমূহ আমাদের সমন্বিত উদ্যোগের ফলে এখানে সুরক্ষিত থাকবে। সবাই একসাথে দেখতে পাবে। নতুন প্রজন্ম এটার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে উদ্বুদ্ধ হবে।’
এসময় অন্যন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য স্বপন গাতিদার, ধূমঘাট শাপলা নারী উন্নয়ন সংগঠনের সভানেত্রী অল্পনা রানী মিস্ত্রী, গঙ্গা ধর মিস্ত্রী, রবীন্দ্রনাথ মন্ডল, বারসিক’র রামকৃষ্ণ জোয়ারদার, বাবলু জোয়ারদার, মননজয় মন্ডল প্রমুখ।
ভিন্ন ভিন্ন কৃষি প্রতিবেশ ও জীবন-জীবিকার বৈচিত্র্যে ভরপুর বাংলাদেশের কৃষি ভূগোল এবং ষড়ঋতুর বৈচিত্র্য দিনে দিনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে স্থানীয় কৃষি প্রাণবৈচিত্র্য। শত পরিবর্তন ও প্রতিকূলতার মাঝে এখনও দেশের অঞ্চল ভিন্নতায় গ্রামীণ জনগণই প্রতিনিয়ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে টিকিয়ে রেখেছে প্রাণবৈচিত্র্য ও জীবন।