উপকূল রক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি
সাতক্ষীরা, শ্যামনগর থেকে মনিকা পাইক
বেড়ীবাঁধ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা এবং উপকূলবাসীর জানমালের রক্ষায় বেরীবাঁধের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেই বিষয়ে আটুলিয়া ইউনিয়নের বিড়ালাক্ষী গ্রামের মানুষের অংশগ্রহণে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রতি। বারসিক’র উদ্যোগে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন জেলে, কৃষক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, স্বেচ্ছাসেবী ও বারসিক’র কর্মকর্তাগণ।
সভায় প্রবীণ ব্যক্তি ইউনুছ আলী বলেন, ১৯৬৮ সালের পরে বাঁধের কাজ শুরু হয়। সরকারিভাবে কাজ শুরু হয়। এখন বেড়ীবাঁধের অবস্থা খুব ভয়াবহ। নদীর চরের জায়গা ভেঙে নদীতে চলে যাচ্ছে। সেই সাথে ঘের মালিকেরা নিজেদের স্বার্থে নদীর সাইট দিয়ে নাইনটি মেশিন বসিয়ে মাছের ঘেরে জোয়ার ভাটা উঠায়। সেখান থেকে ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। বাঁধগুলোর অবস্থা এখন শোচনীয়।
আঃ হাই মিঠু ও অন্যন্যরা জানান, বাঁধকে শক্তিশালী ও টেকসই করার জন্য বাঁধের নিচের চর চওড়া করে সেখানে মানুষের বসবাসের জন্য ঘর বাড়ি তৈরি করতে হবে। বেশি বেশি বনায়ন করতে হবে। বাঁধ তৈরির পর বাঁধের বাইরে বøক তৈরি করতে হবে। রাস্তার ২ পাশ দিয়ে ঘাস লাগাতে হবে। নাইনটি মেশিন দিয়ে পানি উঠানো বন্ধ করে সুইচ গেটের ব্যবস্থা করতে হবে। অকেজো সুইচ গেটগুলো মেরামত করতে হবে। এলাকায় বসবাস করার জন্য বাঁধের তলা ১০০ফুট ও বাঁধের মাথা ৫০ ফুট চওড়া করতে হবে। তা না হলে টিকে থাকা সম্ভব নয়।
এই বিষয়ে নুরনাহার বলেন, ‘এক এক বার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে আমাদের সবজি ক্ষেত, ফলজ গাছ, সব মারা যায়। পুকুরের মাছ বেরিয়ে যায়। লোনা পানি ঢুকে সব শেষ করে দেয়। তাই উপকূলের প্রত্যেক মানুষই চেয়েছেন, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক। এটি অবশ্যম্ভাবী দরকারী ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
খাদিজা বেগম বলেন, ‘দূর্বল বেড়ী বাঁধের কারণে আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। লোনা পানি ব্যবহারের ফলে নারীরা নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে। অনেক দূর থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে হয়। লোনা পানিতে রান্না করে খেতে হয়। এ রকম চলতে থাকলে আমাদের বেঁচে থাকার শেষ আশাটুকু শেষ হয়ে যাবে। আমাদের সকলের একটাই প্রত্যাশা, বেড়ীবাঁধগুলো মজবুত ও টেকসই করে উপকূলীয় এলাকার মানুষদের বেঁচে থাকার অধিকার সুনিশ্চিত করা হোক।’
উল্লেখ্য, উপকূলীয় অঞ্চলে বারবার আঘাত হানে বিভিন্ন দূর্যোগ। যার প্রভাব কোন মতেই আমরা কাটিয়ে উঠতে পারছি না। পানিবন্দি মানুষ, মাথার উপরে খোলা আকাশ, পায়ের নিচে হাটু সমান লোনা জল- এ অভিজ্ঞতা আমাদের প্রতিনিয়ত। গৃহপালিত পশু, মানুষ সবকিছু নিয়ে একই ঘরে বাস করতে হয় দুর্যোগের সময়। আমাদের বুক ফাটা কান্না কেউ শোনে না। এই শোনা যায়, মজবুত বেড়ীবাঁধ তৈরী হবে, কিন্তু দুর্যোগ যখন আসে ভোগান্তি ঠিক আমাদের পোহাতে হয় তাদের কাছ থেকে জানা যায়, ঝড়কে তারা ভয় পায় না, ভয় পায় নাজুক বেড়ীবাঁধকে। ঝড়ের থেকেও বেশি ক্ষতি হয়, যখন ভেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ের চারিদিক প্লাবিত হয়।