সাম্প্রতিক পোস্ট

উপকূলের সবুজ ক্যাম্পাস

সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশ বন্ধু গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। কার্বন শোষণ করে অক্সিজেন প্রদানের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখে সমগ্র প্রাণীকুলকে। বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত বিষয় জলবায়ু পরিবর্তনেরর প্রভাব মোকাবেলায় সারা বিশ্ব যখন গাছ লাগানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ঠিক সেই মূর্হুতে বনায়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করলেন আটুলিয়া আব্দুল কাদের স্কুল এ্যান্ড কলেজ। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ১০নং আটুলিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত আটুলিয়া আব্দুল কাদের স্কুল এ্যান্ড কলেজ। মরহুম চেয়ারম্যান জি এম আব্দুল কাদের ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্যাম্পাসটিকে সবুজায়ন করার জন্য পর্যায়ক্রমে গাছ রোপণ করেন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। তবে বাজেট স্বল্পতা আর উদ্যোগের অভাবে পুরো আঙিনাকে সবুজায়ন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

সুন্দরবন স্টুডেন্ট’স সলিডারিটি টিম ও বারসিক উক্ত স্কুল এ্যান্ড কলেজে প্রতিবেশীয় শিক্ষা কার্যক্রম তথা বারসিক এর নিয়মিত মাঠ যোগাযোগ ও সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসটিকে সবুজ ক্যাম্পাস তৈরির প্রস্তাব উঠে আসে। পরে প্রতিষ্ঠানটিকে সবুজ ক্যাম্পাস তৈরির সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। শ্যামনগর উপজেলা সামাজিক বনায়ন কেন্দ্র, আটুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ, আটুলিয়া আব্দুল কাদের স্কুল এ্যান্ড কলেজ ও সুন্দরবন স্টুডেন্টস সলিডারিটি টিম এর যৌথ সুপারিশ ও পরামর্শ মোতাবেক সবুজ ক্যাম্পাসের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। পূর্ব থেকে কলেজ আঙিনায় কিছু সংখ্যক মেহগনি, নিম ও পেয়ারা গাছ ছিল। সবুজ ক্যাম্পাস তৈরির শুরুতে কলেজ প্রতিষ্ঠান নিজেদের ফান্ড থেকে ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ করে চারপাশ ভালোভাবে ঘেরা দেন। এ প্রসঙ্গে আটুলিয়া আব্দুল কাদের স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুভাষ চন্দ্র মন্ডল সবুজ বলেন, “সবুজ ক্যাম্পাস তৈরির জন্য সুন্দরবন স্টুডেন্টস সলিডারিটি টিম ও বারসিককে ধন্যবাদ। বনবিভাগ ও ইউনিয়ন পরিষদসহ সকলের সহযোগিতা ও আন্তরিকতায় আমাদের কলেজটিকে সবুজ ক্যাম্পাস করতে পেরেছি।”
1
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমানোর জন্য গাছের কোন বিকল্প নেই। বৃক্ষরাজি ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণ করে অক্সিজেন প্রদান করে বাঁচায় সকল প্রাণীকূলকে। প্রাণ ও প্রকৃতি এবং সবুজ পৃথিবী সুরক্ষায় আমাদের উচিত সকলকে বনায়নের দিকে গুরুত্ব দেওয়া। উপযুক্ত জায়গাসহ সকল প্রতিষ্ঠান আঙিনাকে বনায়নের আওতায় এনে সবুজ ক্যাম্পাস তৈরি করা প্রয়োজন। তাছাড়া গাছ থেকে আমরা সবুজ জ্বালানি/নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংগ্রহ করি। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও নতুন প্রজন্মকে গাছের সাথে পরিচিতি ও গাছের প্রতি মমতাবোধ বৃদ্ধিতে উপকূলের সবুজ ক্যাম্পাস তৈরি করা হয়।

সবুজ ক্যাম্পাস সম্পর্কে শ্যামনগর উপজেলা বন কর্মকর্তা এম.এম মিজানুর রহমান বলেন, “আমাদের বেঁচে থাকার জন্য গাছের কোন বিকল্প নেই। প্রাণ-প্রকৃতি ও বৈচিত্র্য সুরক্ষার তথা আমাদের একটি সুন্দর পৃথিবীর জন্য গাছ লাগাতে হবে। বিশেষ করে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের গাছের সাথে পরিচিতি বৃদ্ধিতে গাছের সাথে ভালোবাসার বন্ধন তৈরি করতে হবে।”

বারসিক থেকে সবুজ ক্যাম্পাস তৈরির জন্য এলাকা উপযোগি গাছের চারা সহযোগিতা করা হয়। “জীবিকার জন্য গাছ, জীবনের জন্য গাছ” এই স্লোগানে সম্প্রতি আটুলিয়া ইউনিয়নের আব্দুল কাদের স্কুল এ্যান্ড কলেজ আঙিনায় বনায়নের শুভ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সবুজ ক্যাম্পাস তৈরির কাজ শুরু হয়। শ্যামনগর উপজেলা সামাজিক বনায়ন কেন্দ্র, আটুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ, এ.কাদের স্কুল এ্যান্ড কলেজ, বারসিক ও সুন্দরবন স্টুডেন্টস সলিডারিটি টিম এর যৌথ উদ্যোগে এলাকা উপযোগি ফলজ, বনজ, ঔষধি ও শোভাবর্ধনকারী ৫০০টি বিভিন্ন প্রজাতির (আম, পেয়ারা, নারকেল, আমলকি, লেবু, সবেদা, কদবেল, তেতুল, মেহগনি, নিম, পেপুল, কদম, শিউলী, কৃষ্ণচুড়া, রাধাচুড়া, বকুল, গোলাপ, জবা, গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা, রঙ্গন, ড্রেসার) গাছের চারা রোপণ করা হয়। কলেজ ফাউন্ডেশনের সামনে সুজজ্জ্বিত ফুলের বাগান, সুবিশাল মাঠের চারপাশে সারি সারি গাছের চারা, মূল ফটকের সামনে শোভাবর্ধনকারী কদম ও কৃষ্ণচুড়া গাছ, পুকুর ও ফাউন্ডেশনের চারপাশে ফলজ, বনজ, ঔষধি ও শোভাবর্ধনকারী এলাকা উপযোগি গাছের চারা রোপণ করে বনায়ন করা হয়েছে। যেটা সবুজ ক্যাম্পাসকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।

2আটুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আটুলিয়া আব্দুল কাদের স্কুল এ্যান্ড কলেজের সভাপতি আবু সালেহ বাবু বলেন, “আমাদের প্রত্যেকের উচিত প্রতিবছর অন্তত পক্ষে ২টি করে গাছ লাগানো। আজকের একটি গাছ আগামী দিনের একটি ভবিষ্যৎ। সন্তান যেমন ভবিষ্যতে আমাদের সাহায্য করে, তেমনি গাছও আমাদের সেই আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারে। কলেজ আঙিনাকে গাছে গাছে ভরিয়ে দিয়ে সবুজ ক্যাম্পাস করা হয়েছে।”

আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য সবুজ পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে সবুজ ক্যাম্পাস এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও প্রাণ প্রকৃতি সুরক্ষায় দেশের সকল প্রতিষ্ঠানকে সবুজ ক্যাম্পাস তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ভুমিকা রাখা সম্ভব হবে।

happy wheels 2