বরেন্দ্র অঞ্চলে জিরা মসলার চাষ শুরু
রাজশাহী তানোর থেকে মো. শহিদুল ইসলাম (শহিদ) ও অমৃত কুমার সরকার
রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার বহড়া গ্রাম। এই গ্রামে শীতকালীনসহ সারাবছর প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি চাষ হয়। বারসিক থেকে জৈব পদ্ধতিতে ফসল চাষাবাদের প্রশিক্ষণ পেয়ে এই গ্রামের উদ্যোগী কৃষক মো. আ. হামিদ শুরু করেছেন বিভিন্ন শাকসবজিসহ জিরা মসলার পরীক্ষামূলক চাষ। পাশাপাশি ফসল চাষাবাদে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমানোর জন্য নিজের বাড়িতে তৈরি করেছেন ভার্মি কম্পোস্টের খামার।
মো. আ. হামিদ নতুন নতুন ফসল চাসাবাদের ক্ষেত্রে একজন উদ্যোগী কৃষক। তাঁর কাজে অনুপ্রাণীত হয়ে বহড়া গ্রামের প্রায় ৫০জন কৃষক বর্তমান নিজেদের জমিতে বিভিন্ন ধরনের কম পানিনির্ভর ফসল চাষাবাদে উদ্যোগী হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মো. আ. হামিদ বলেন, “আমাদের এলাকায় ফসল চাষাবাদের ক্ষেত্রে পানি একটি বড় সমস্যা। তাই আমি সবসময় চিন্তা করি পানি সেচ কম প্রয়োজন হয় এমন ফসল সম্প্রসারণ করে মাটির নিচের পানি কম উত্তোলন করার।”
চলতি বছরে নতুন ফসল সম্প্রসারণের জন্য পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে জিরা মসলার বীজ সংগ্রহ করে নিজের ২৫ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলক চাষ করছেন তিনি। এর মধ্য থেকে ২ শতাংশ জমিতে বোর্দ মিকচার, তরলসার ও কুইক কম্পোস্ট দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে দেখছেন জৈব পদ্ধতিতে জিরা চাষের সম্ভাবনা। তিনি গত বছরের ডিসেম্বর মাসের ১৩ তারিখে জমিতে জিরার বীজগুলো বপন করেন।
আ. হামিদ জমিতে মোট ৫টি চাষ দেন। ৪র্থ চাষের সময় তিনি ভার্মি কম্পোস্ট সার দিয়ে ৫ম ও শেষ চাষ দেন। এরপর একটি মই দিয়ে বেড তৈরি করেন। তার মতে, জিরা চাষের জমির মাটি অবশ্যই ঝুরঝুরে করে নেওয়া প্রয়োজন। এরপর আগের দিন ভিজিয়ে রাখা জিরা বীজের পানি ঝড়িয়ে নিয়ে বীজতলায় (যা মূল জমি হিসেবে বিবেচিত) বপন করে নিতে হয়। এর ৫-৭দিন পর বীজ থেকে চারা বের হয়ে আসলে একটি সেচ দিয়ে কুইক কম্পোষ্ট সার উপরি প্রয়োগ করা হয় বলে তিনি জানান। বর্তমানে তাঁর জিরা গাছের বয়স ৪২দিন।
জিরা চাষ প্রসঙ্গে মো. আ. হামিদ বলেন, “জিরার জমিতে কখনই আগাছা জন্মাতে দেওয়া যাবে না। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং কোন রোগ-পোকার আক্রমণ হলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
জিরা মসলার চাষ বাংলাদেশে নতুন হলেও কিছু আগ্রহী কৃষক অনেক আগেই এই ফসল চাষ করেছেন বলে জানা যায়। তবে তানোর উপজেলায় মো. আ. হামিদের উদ্যোগটি প্রথম। বরেন্দ্র অঞ্চলে এই ফসল চাষের উদ্যোগটিও নতুন। জিরা চাষী মো. আ. হামিদ বলেন, “নতুন এই ফসল চাষের ক্ষেত্রে আমি বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যাচ্ছি। আশা করি এখান থেকে আমি ভালো ফলাফল পাবো। আর এখান থেকে আশানুরূপ ফলাফল পেলে আমি প্রত্যক আগ্রহী কৃষকদের মাঝে এই ফসলের চাষ ছড়িয়ে দিতে চাই।”