পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার অঙ্গীকার

ঢাকা থেকে ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২২ উপলক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা কলিং ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দেলান (পবা) আয়োজিত পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ শীর্ষক সেমিনার পরিবেশ অধিদপ্তরের অডিটরিয়ামে পবা চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: মনিরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ নজমূল আহসান, সমাজবিজ্ঞানী ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. দেবাশীষ কুমার কুন্ড, বারসিক’র পরিচালক রোমাইসা সামাদ, ইউএসএআইডি প্রতিনিধি সুমনা বিনতে মাসুদ, কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি মইনুদ্দীন আহমেদ, ইফফাত জেরিন।

অনুষ্ঠানে ধারণাপত্র উত্থাপন করেন লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ। সেমিনারের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন বারসিক’র প্রজেক্ট ম্যানেজার ফেরদৌস আহমেদ ও সঞ্চালনা করেন কনসোর্টিয়াম কোর্ডিনেটর সানজিদা জাহান আশরাফি। দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে), জাতীয় পরিবেশ পদকপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বারসিক, কাপ ও ইনসাইট্স যৌথভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছে।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, ‘নানান আয়োজনে এবার পরিবেশ দিবস উদযাপিত হচ্ছে আর এ আয়োজনটি তার থেকে ব্যতিক্রম। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি অত্যন্ত জরুরি বিষয় যেখানে স্থানীয় সরকার ও নগর কর্তৃপক্ষেরও বিরাট ভূমিকা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর যখন কাজ করতে যান তখন সকল জায়গা থেকেই নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু পরিবেশ অধিদপÍরের কাজের উপর এদেশের অনেক কিছুই নির্ভর করে। সারাদেশে পরিবেশ অধিদপ্তর প্রায় ৫০টি জেলায় কাজ করে, লোকবল বাড়িয়ে আগামীতে সকল জেলায় কাজ করবে।

বিশেষ অতিথির পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক, সৈয়দ নজমূল আহসান বলেন, ‘পূর্বতন পরিবেশ বিধিমালাকে সংশোধন করে দ্রুত নতুন পরিবেশ বিধিমালা জারি হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আজ যেসব সুপারিশ দেয়া হলো এর অনেকগুলোই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং বাকীগুলোও বাস্তবায়নের জন্য কাজ চলছে।’

ড. দেবাশীষ কুন্ডু বলেন, পৃথিবী একটি হলেও সবার পৃথিবী একরকম নয়। ধনী মানুষ ও রাষ্ট্ররা সবচেয়ে বেশি বর্জ্য উৎপাদন করেন। ধনী রাষ্ট্রের বেহিসেবি জীবনের ফলাফল হলো পরিবেশ দূষণ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার রাজনৈতিক অর্থনীতি রয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংস্কৃতির সাথেই যুক্ত এবং এটা দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ও।’

বারসিকের পরিচালক রোমাইসা সামাদ বলেন, কেবল কর্তৃপক্ষের দায় নয় সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পরিবেশ দূষণ কমানো সম্ভব। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিশিষ্ট কবি কামুরুজ্জামন ভূইয়া, পুরান ঢাকার নাগরিক উদ্যোগের নাজিম উদ্দিন, সুজনের কেমেলিয়া চৌধুরী, নাসফের সাধারণ সম্পাদক তৈয়ব আলী, বস্তিবাসী অধিকার সুরক্ষা কমিটির সভাপ্রধান হোসনে আরা বেগম রাফেজা,জনউদ্যোগের তারিক হোসেন মিঠুল, এনবাসের হান্নান আখন্দ, ফাতেমা আক্তার, ইয়ুথ প্রতিনিধি শাহিনুর আক্তার, উজ্জল মাহমুদ প্রমূখ।

সেমিনারের শুরুতে ঢাকা কলিং প্রকল্পের কাজ নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারী প্রদর্শন করা হয় এবং বস্তিবাসী সংগঠনের প্রতিনিধিরা মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: মনিরুজ্জামানের হাতে স্মারকলিপি তুলে ধরেন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ নাজমুল আহসানের হাতের আরেকটি পৃথক স্মারকলিপি তুলে দেন।
ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে প্রোমোটিং এ্যাডভোকেসি এন্ড রাইটস (পার) কর্মসূচিটি কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল এর কারিগরি সহযোগিতায় স্থানীয় সংস্থা দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে) তার কনসোর্টিয়াম সদস্যদের (বারসিক, কাপ ও ইনসাইট্স) নিয়ে ঢাকা কলিং প্রকল্প কাজ করছে।


সেমিনার থেকে কিছু সুপারিশগুলো তুলে ধরা হয়। সেগুলো, ব্যক্তি, পরিবার ও কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতাবাড়াতে হবে, এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি করতে হবে এবং নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে, সিটি কর্পোরেশনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটিতে বস্তিবাসী প্রতিনিধি রাখতে হবে, গণমাধ্যমে বর্জ্যব্যবস্থাপনার সমস্যা এবং বস্তিবাসীদের ইতিবাচক ঘটনাগুলোও তুলে ধরতে হবে, বর্জ্যকে জিম্মি/ ময়লার উছিলায় বস্তিবাসীকে জিম্মি করা যাবে না, ময়লা নিতে এসে হুমকী দেয়া যাবে না, যত্রতত্র রাস্তায় ও বস্তি এলাকায় বর্জ্য ফেলা যাবে না।নির্দিষ্ট স্টেশনে বর্জ্য ফেলতে হবে। বর্জ্য ভাগ করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে ইত্যাদি।

happy wheels 2

Comments