একজন সুরেন্দ্র মোহন রায় সমাজের আদর্শ
সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান ও গাজী শাহাদাত হোসেন বাদল
বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী সুরেন্দ্র মোহন রায় স্মরণে তার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ও স্মৃতিচারণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রতি।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পুটাইল ইউনিয়নের কৈতরা রাজবংশী পাড়ায়, কৈতরা, কৈতরা রাজবংশী পাড়া ও ফুলঝুঁড়ি ৩টি গ্রামের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহিতকরণ উন্নয়নের মূলধারায় যুক্তকরণ ও সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতা তৈরিতে শিক্ষক সুরেন্দ্র মোহন রায়ের কনিষ্ঠ পুত্র বিমল রায় ও তার পরিবার বর্গ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন।
কৈতরা রাজবংশী পাড়ার পিছিয়ে পড়া ও পেশাজীবী জনগোষ্ঠী মধ্যে থেকে উঠে আসা মত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কমল রাজবংশীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একাত্তোর এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ও সামাজিক সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ, বিশেষ আলোচক ছিলেন রাজীবপুর আদর্শ কলেজের সহকারি অধ্যাপক আশুতোষ রায়, বাইতরা সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রতন মন্ডল, সাবেক ইউপি সদস্য চিত্তরঞ্জন সরকার (ভেজা), মানিকগঞ্জ আ্যাসেম্বেলি অফ গড ক্রাস পাষ্টর এডওর্য়াড জামান, কৈতরা মন্দিরভিত্তিক স্কুলের শিক্ষিকা ও কৈতরা কৃষক কৃষাণি সংগঠনের সভাপতি ঝর্ণা রায় ও সুরেন্দ্র মোহন রায়ের কনিষ্ট পুত্র বিমল রায়। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বারসিক কর্মকর্তা গাজী শাহাদাত হোসেন বাদল ও স্যামুয়েল হাসদা প্রমুখ।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, ‘শিক্ষক সুরেন্দ্র মোহন রায় তার দীর্ঘ শিক্ষা জীবনে নবাবগঞ্জ উপজেলার শোল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মময় শিক্ষা জীবন শুরু করেন এবং মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাফাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং লেমুবাড়ি বিনোদা সুন্দরী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যে দিয়ে তার সফল কর্মময় শিক্ষক জীবনের ইতি টানেন।’ বক্তারা আরো বলেন, ‘বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থায়, সকল জাতি ধর্ম বর্ণ, নির্বিশেষে সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষকে শিক্ষা গ্রহণে অর্ন্তভুক্ত করার মানসিকতা তার শিক্ষক জীবনকে আলোকিত করেছে। তিনি তার শিক্ষকজীবনে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নিজ গ্রাম ও পরিবারে প্রতি শিক্ষার প্রসারে অবিচল ছিলেন। তাছাড়া তিনি দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষাথীদের উৎসাহ যোগাতে বাড়িতে বিনামুল্যে পড়ানোর ব্যবস্থা করতেন, স্কুলের বেতন মৌকুফ করার উদ্যোগ গ্রহণে গ্রামের অনেকেই উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। তিনি তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গ্রামেই শুধু সফল ছিলেন না একজন পিতা হিসেবেও তিনি ছিলেন সফল। তিনি তার দুই কন্যা ও চার ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে একজন আদর্শ পিতার দায়িত্ব পালন করেছেন।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি কমল রাজবংশী বলেন, ‘আমি একজন পেশাজীবী পরিবারের সন্তান। আমাদের পাড়ার সকলেই মাছ ধরে জীবন জীকিা নির্বাহ করতেন। অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা ও সচেতনতার অভাবে সবার লেখাপড়া করার কোন সুযোগ ছিল না। আমি লেখাপড়া করেছি লেমুবাড়ি বিনোদা সুন্দরী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। আর সেই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সুরেন্দ্র মোহন রায়। আমি তার কাছে নিয়মিত প্রাইভেট পড়তাম এবং তিনি আমার লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহ যোগানোর কারণেই আমি আজ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পেরেছি। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে থেকে তার অনুপ্রেরনায় লেখাপড়া শিখে মত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি সুরেন্দ্র মোহন রায় স্যারের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। একজন সুরেন্দ্র মোহন রায় সমাজের আদর্শ।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষক সুরেন্দ্র মোহন রায়ের কনিষ্ট পুত্র বিমল রায় বলেন, ‘প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় যুক্ত করা সমাজের সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের দায়িত্ব। সকলেই যেন প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণের সমান সুযোগ পায় এবং প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করে সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে সেই সামাকিজক দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের পরিবারের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি এই ক্ষুদ্র উদ্যোগের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নয়নের আরো নতুন মানুষ তৈরি হবে এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের বিকাশ ঘটবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টীর উন্নয়নে আমাদের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।’
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের মধ্যে লেখাপড়ার আগ্রহ বৃদ্ধিতে তিন টিগ্রামের ৭৮ জন শিক্ষার্থীদের শিক্ষক সুরেন্দ্র মোহন রায়ের পরিবারের পক্ষ থেকে শিক্ষা উপকরণ হিসেবে খাতা ও কলম উপহার দেওয়া হয়।