সাম্প্রতিক পোস্ট

পানির ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাধারগুলোর লিজ প্রথা বাতিলের দাবি

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
আঞ্চলিক ভিন্নতায় রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় আলাদাবৈশিষ্ট্যপূর্ণ। উঁচু-নীচু মাঠ আর এঁটেল লাল মাটিসহ আবহাওয়ার ভিন্নতা রয়েছে এই এলাকাটিতে। তাই এই অঞ্চলের সমস্যা সম্ভাবনাগুলোও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের থেকে আলাদা। তাই এই অঞ্চলের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন হওয়া দরকার স্থানীয় ভৌগোলিক দিককে বিবেচনা করে। একই সাথে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মতামত ও কার্যকর গবেষণার মধ্যে দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো তৈরি করা দরকার।


জলবায়ু দুর্য়োগের কারণে বর্তমান বিশে^ নানামূখী সংকট দেখা দিচ্ছে। বৈশি^ক জলবায়ুর আঞ্চলিক অভিঘাতের কারণে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলেও নানামূখী ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নারী, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, কৃষক, মৎসজীবীসহ প্রান্তিক পর্যায়ের নানা পেশার মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে। জলবায়ু পরির্বতনের কারনে বরেন্দ্রভূমির জনগোষ্ঠী নানামূখী ঝুঁকির সন্মূখীন। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে তরুণ-যুব জনগোষ্ঠী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিজেদের ভবিষ্যৎ ঠিকভাবে গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছেনা। বরেন্দ্র অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। অনাবৃষ্টি, তীব্র দাপদহ, অধিক খরা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকার উপর প্রতিনিয়ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আবার প্রাকৃতিক জলাধার তথা- খাল, খাড়ি এবং পুকুরগুলো লিজ দেয়ায় প্রান্তিক মানুষ পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একদিকে মানুষ সৃষ্ট দুর্যোগ রাসায়নিক কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার আবার জলবায়ু পরিবর্তনে পানি সংকটের জন্য নানামূখী বাঁধার কারণে জীবন বিপন্ন হচ্ছে। জলবায়ু পরির্তনসহ এর সাবির্ক নেতিবাচক প্রভাব চুড়ান্তভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠী।
বিশ^ জলবায়ু কর্ম-সপ্তাহ উদযাপন কর্মসূচি- ২০২২ উপলক্ষে সম্প্রতি রাজশাহীর মহানগরীর কাজলাস্থ অকটয় মোড়ে অবস্থিত হেরিটেজ আর্কাইভস বাংলাদেশ সেমিনার হলে তীব্র দাপদহ ও বিপন্ন জীবন শীর্ষক মুক্ত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরাম’র যৌথ আয়োজনে উক্ত সংলাপে বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা শ্রেণী ও পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে বরেন্দ্র অঞ্চলের পুকুর -প্রাকৃতিক জলাধারগুলো সংরক্ষণসহ বর্তমান লীজ প্রথা বাতিলের দাবি করেন। তাঁরা বলেন, ‘গ্রামের ভিতরের পুকুর এবং জলাধারগুলো লিজ দেবার ফলে পানি ব্যবহারে বাধাগ্রস্ত হতে হয়। লিজ গ্রহণকারিরা পুকুরের পানিতে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে পানির ব্যবহারের উপযোগী নয়। অনেক সময় পশু পাখির মল-বিষ্ঠা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করার কারনে, সেই পুকুরের পানি মানুষের ব্যবহার অনোপোযোগী হয়ে যায়। সংলাপে অংশগ্রহণকারিগণ দাবি করেন- এই লীজ প্রথা বাতিল করে গ্রামের মধ্যে বসবাসরত মানুষরদের নামে, গ্রাম বা কমিউনটির নামে বিনা শর্তে জামানত বিহীন বরাদ্দ দিলে সেই পানি ব্যবহার করে তাঁরা ফসল ফলানোসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। এর ফলে গ্রামের মানুষের পানি সংকটের দিকটা কমে আসবে। অন্যদিকে বিলের মধ্যে যেসকল পুকুর এবং প্রাকৃতিক জলাধার আছে সেগুলোরও লিজ প্রথা বন্ধ করে স্থানীয় কৃষকদের বরাদ্দ দিতে হবে। যাতে সেই পানি ব্যবহার করে ফসল ফলানো যায়। পরিত্যক্ত এবং ভরাট পুকুরসহ স্থানীয় জলাধারগুলো কার্যকর খনন করতে হবে। নামকাওয়াস্তে প্রকল্পের নামে সামান্য খননে গভীর না হওয়ার কারণে পানির ধারণ ক্ষমতা কম হয়।

সংলাপে অংশগ্রহণকারি আদিবাসী নারী নেত্রী চিচিলা হাঁসদা (৪০) বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশের পুকুরগুলো অন্য এলাকার বা অন্য মানুষকে লীজ দেবার কারণে আমরা সেই পুকুরের পানি ব্যবহার করতে পারিনা। আমাদের বাড়ির সম্পদগুলো এভাবে অন্য মানুষকে লিজ দিয়ে আমাদের পানির সংকট আরো বৃদ্ধি করেছে।’ তিনি দাবি করেন পুকুরগুলো গভীর খনন করে সেগুলো গ্রামের মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। লিজ প্রথার কারণে আমরা দরিদ্র আদিবাসীগণ পুকুরের পানিতে অধিকার পাচ্ছিনা।


জলবায়ু পরির্বর্তনে তরুণদের বিভিন্ন দিকগুলো নিয়ে কথা বলেন রাজশাহীর তরুণ স¤্রাট রায়হান। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরির্বর্তনের কারণে আমাদের কর্মসংস্থান ঝঁকির মধ্যে পড়েছে। আমাাদের বৈচিত্র্যময় কর্মসংস্থান কমে গেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে দিনে দিনে ভুগর্ভস্থ্য পানি কমে যাবার কারণে এবং অন্যদিকে ভূউপরস্থ পানির উৎসগুলো কমে যাওয়ায় আগামী প্রজন্ম জীবন জীবিকা হুমকির মধ্যে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।’ পবা উপজেলার কৃষক আব্দুল জব্বার (৬১) বলেন, ‘অধিক গরমে আমাদের সবজি ক্ষেত পর্যন্ত পুড়ে যায়। এভাবে আমাদের ফসলের ক্ষতি হয়। কিন্তু এই ক্ষতির কারণে আমরা দিনে দিনে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি।’ তিনি এর ক্ষতিপুরণের দাবি করেন।

বরেন্দ্র যুব সংগঠন ফোরমের সদস্য সচিব শাইখ তাসনীম জামালের সভাপতিত্বে উক্ত সংলাপে অংশগ্রহণ করে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সৈয়দ আলী রেজা, লেখক গবেষক পাভেল পার্থ, বারসিক’র সমন্বয়কারি জাহাঙ্গীর আলমসহ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।
সংলাপে বারসিকের গবেষক অমৃত কুমার সরাকার তীব্র দাপদহ ও নারীর স্বাস্থ্যগত দিক বিষয়ে গবেষণার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘তীব্র দাপদহের কারনে নারী ও শিশুর স্বাস্থ্যগত রোগবালাই দেখা দিচ্ছে বেশি।

সংলাপটির ধারণাপত্র পাঠ এবং সঞ্চালনা করেন বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারি ও গবেষক শহিদুল ইসলাম। ধারণাপত্রে বলা হয়- বরেন্দ্র অঞ্চলে বহু জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। এখানে আদিবাসী বাঙ্গালীসহ নানা পেশার মানুষ বসবাস করেন। জলবায়ু পরিবর্তনসহ পানির সংকটের কারণে তাঁদের বৈচিত্র্যময় পছন্দের খাদ্য ও পেশা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে পানি অধিকারের দিকুগলোও সংকোচিত হচ্ছে।

happy wheels 2

Comments