সেবা করে আনন্দ পাই

মানিকগঞ্জ থেকে মো. নজরুল ইসলাম

জীবন সংগ্রামে আজীবন বিপ্লবী একজন মানবতাবাদী ও পরোপকারি নারী হালিমা বেগম। তাঁর জন্ম মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার পেঁচারকান্দা গ্রামে দরিদ্র কৃষক পরিবারে ১৯৫১ সালে। ৫ বোন ৩ ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় হলেও যৌথ পরিবারের মধ্যে অনেক সংগ্রাম করেই বাল্য জীবন কাটিয়েছেন তিনি। জন্মের আগে বাবাকে ও ৪ বছর বয়সে মাকে হারিয়ে এতিম হয়ে বাল্যকাল কাটিয়েছেন এবং বড়দের ফরমাইজ ও মায়ের দেয়া ছাগল পালতেই কেটে যায় বেলা। স্কুলের চেহারা দেখার সুযোগ হয়নি বাল্যকালে। তার ভাই বোনেরা অনেক সুুন্দর ছিলেন এবং তিনি ছিলেন ঐ সময়ের এলাকার সবচেয়ে সুন্দরী নারী। মাত্র ৯ বছর বয়সেই প্রতীবেশী গ্রাম কাউটিয়াতে রাসু মিয়ার সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন হলিমা ।

IMG_20190310_170236
শুরু হয় নতুন জীবন। বাল্য বিবাহের শিকার হালিমা ২ বছর পরেই মা হন। কয়েক বছরের মধ্যেই তাঁর ২ ছেলে ও ২ মেয়ে প্রায় সমানভাবে বাড়তে থাকে এবং প্রত্যেকেই স্কুলে যায়। সংসারে উন্নতিও হয় বটে। হালিমা সংসার সামলিয়ে দ্বাইমার কাজও করেন। এই বিষয়ে তার দক্ষতা দেখে অবাক হতেন স্বাস্থ্যকর্মীরাও। তার এই সেবামূলক কাজ এলাকার গন্ডি ছাড়িয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

হালিমা সংসার ও সেবামূলক দুটো কাজেই আনন্দ খুঁজে পান। গণমূখী চরিত্রের এই মানুষটি সবাইকে আপন করে নিয়েছিলেন। নিজের সম্ভ্রম ও নৈতিকতার প্রশ্নে ছিলেন তিনি আপষহীন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় হালিমা শিক্ষিত না হলেও নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য, বয়োঃসন্ধিকাল, জরায়ু, বাচ্চা প্রসব ও মাতৃত্বকালিন বিষয়ে স্থানীয় জ্ঞানের ভান্ডার রয়েছে তাঁর। সরকারিভাবে মা ও শিশু হাসপাতাল কর্তৃক ধাত্রী মাতা প্রশিক্ষণে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। এলাকায়ও রয়েছে তার বেশ সুনাম। এভাবে প্রচুর রোগী আসে তার বাসায়। একা হলেও অনেক বড় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। কারণ হিসেবে বলেন, ‘যে আমার আত্মীয় স্বজনের বাইরেও প্রতিদিন আমার কাছে মানুষ সমস্যা নিয়ে আসে, রোগী হয়ে আসে হাসপাতালে সিট না পাইলেও আমার বাসায় সিট হবে।’

IMG_20190310_170249
তাঁর বাসায় রোগীদের আশ্রয় দিলেও কারো কাছ থেকে কখনোই অর্থ দাবি করেন না তিনি। কেউ দিলেও তিনি তা নেননি। তিনি বলেন, ‘আমি যা রোজগার করি সেটি আমি শেষ করতে পারি না। তাই আমার মত অসহায় গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দেয়াই আমার কাজ। আমার কোন সঞ্চয় নাই, আমি এটি পছন্দ করি না। ভবিষ্যত বলে আমি কিছু বিশ্বাস করি না, আজকেই আমার ভবিষ্যত, আগামী কালের চিন্তা করি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মাইজভান্ডারের একজন গোলাম, আমি ভান্ডারি, আমার ধন সম্পদের অভাব নেই। তবে আমি যে দিন থাকব না সেদিন আমার ধন সম্পদ থাকবে না তবে থাকবে আমার কর্ম, সাধনা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা।

হালিমা বেগম বলেন, ‘আমি এখন কলা বিক্রি করি। কারণ সরকারি চাকরিজীবীরা যেমন অবসরে যায় পেনশন পায় বসে বসে খায় আমার তো পেনশন নাই। আমি কি করব আমিও তো এখন অবসরে। বয়স সত্তর আর কত। কলা বিক্রিই হলো আমার পেনশন। যতদিন আছি এভাবেই কাজ করে খাব। কারো কাছে মাথা নত করব না। আজীবন মানুষের মাঝে আমার যতটুক সামর্থ্য আছে তাই দিয়েই সেবা বিলিয়ে দেব এই হলো আমার পণ।’

happy wheels 2

Comments