নারীদের প্রতিটি কাজের স্বীকৃতি চাই
মানিকগঞ্জ সিংগাইর থেকে আছিয়া আক্তার
নারী শব্দটি অনেক ছোট হলেও কাজ আর গুণের পরিসীমা ব্যাপক। পরিবারে স্বামী সন্তান অসুস্থ হলে নারী হয় ডাক্তার-সেবিকা। বাচ্চাদের পড়ালেখার সময় নারী হয় শিক্ষক। কেউ বেড়াতে গেলে তাকে হতে হয় বিউটিশিয়ান। জামা কাপড় সেলাইয়ের দর্জি, খাবার প্রস্তুতে রাঁধুনী সাথে পরিবেশক। জুতা সেলাই থেকে চন্ডি পাট সবই তার একার হাতে। এমনি হাজার গুণে গুণান্বিত নারীর জীবনজয়ী কাহিনী তুলে ধরছি, লেখনির মাধ্যমে।
মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের স্বরুপপুর গ্রামের বউ প্রতীমা রানী (৫০)। তিনি পেশায় একজন মাধ্যমিকের শিক্ষিকা। স্বামী রঞ্জিত সরকার ৫৫। তিনি পেশায় একজন কৃষক। দু’ছেলে নিয়ে তাদের সংসার। একই ইউনিয়নের পাছপাড়া গ্রামের বউ শারমিন শীলা (৩৫)। পেশায় একজন গৃহিনী। স্বামী আব্দুর রহিম ৪৫। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। এক ছেলে নিয়ে তাদের ছোট সংসার।
শিক্ষিকা প্রতীমা বলেন, ‘ভোর ৪:০০ ঘুম থেকে উঠে পূজা দেই। তারপর ঘর-উঠান ঝাড় দিয়ে চাল মেপে-ধুয়ে চুলায় ভাত বসিয়ে সবজি কাটা শুরু করি। চুলার রান্না চুলায় রেখে গোয়াল থেকে গরু বের করে খরের পালা থেকে খড় টেনে পানি দিয়ে ভিজিয়ে তাদের খেতে দেই। আবার রান্না ঘরে যাই ভাত নামিয়ে মাছ-ডিম ভাজি,সবজি তরকারি,ডাল রান্না করি। থালাবাসন পরিষ্কার করে সবাইকে খাবার দিয়ে নিজে খেয়ে স্কুলে যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘রমজানের রোজার কারণে স্কুল অর্ধেক বেলা। স্কুল থেকে এসে গরুকে গোসল করিয়ে ভুট্টা ঘাস কেটে দিয়ে,বাশ ঝাড় থেকে জ¦ালানি সংগ্রহ করি। রান্না ঘর, চুলা লেপি। গরুর ঘর ঝাড়– দিই, কয়েল ধরিয়ে মশা ঘর থেকে বের করে, মশারী টানাই। তারপর ঘরে দিই। রাতের রান্না করি। সকলকে এক সাথে খাবার দেই। নিজে খেয়ে ছোট ছেলেকে পড়াতে বসি। ছেলের পড়া হলে মশারি টানিয়ে রাত ১১টায় ঘুমতে যাই।
অন্যদিকে শারমিন শীলা বলেন, ‘সংসার ছোট হলেও ছোট নয় সংসারের কাজ। বাড়ির ভেতর কাজ করতে গিয়ে সারাদিন চরকি কাটার সুতোর মতো ঘুরতে হয়। ভোরে ঘুম থেকে উঠে রান্না করি, ছোট মাছ, বড় মাছসহ ৩ ধরনের মাছ কাটি। পুকুরে নিয়ে তিনটে কম্বলসহ কাথা ধুই। সবজি গাছে পানি দেই। ছেলের জ¦র তার মাথায় পানি দিই, সময় মতো ঔষধ খাওয়াই। স্বামী দোকান থেকে আসলে তার গোসলের পানি উঠায়ে দিই, খাবার দিই। ভাত ও পিঠার চাল ঝাড়ি। খাটের তোষক রোধে দেয়, সোকেজ, আলমারি, আলনা গোছাই।’
প্রতীমা রানী ও শারমীন শীলা দু’জনই জানান, লিখতে গেলে খাতার পৃষ্ঠা শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু নারীদের কাজ শেষ হবে না। আমাদের এই কাজের নগদ কোন মূল্য নেই বলে পুরুষরা আমাদের এই কাজকে কাজই মনে করে না। দিন শেষে আমরা আমাদের কাজকে পুরুষের কাজের মত সমমর্যাদা চাই।’