প্রবীণদের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে
রাজশাহী থেকে মো. জাহিদ আলী
‘একবার জন্ম নিলে মরতে হবে’ এই বাস্তবতা প্রতিটি জীবের ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য তেমনি বার্ধক্যও মানুষের জীবনের একটি স্বাভাবিক বাস্তবতা। মানুষের এই জীবন পরিক্রমায় শৈশব, কৈশর, যুবক, প্রৌঢ় ও বার্ধক্যকাল দ্বারা বিভক্ত। জীবন সংগ্রামের শেষদিকে মানুষের শারীরিক, মানসিক, আচরণগত, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিবেচনা করে বিভিন্ন দেশে একেক রকম বয়সের পরিমাণে মানুষের বার্ধক্য নির্ণয় করা হলেও বাংলাদেশে ৬০ বছরের উর্দ্ধে ব্যক্তিদের প্রবীণ ব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সরকার তার রাষ্ট্রীয় সকল কার্যকলাপে ৬০ বছরের মানুষকে প্রবীণ হিসাবে গণ্য করে কাজ করে থাকে।
প্রবীণ ব্যক্তিদের অধিকার ও নীতিমালা সম্পর্কে ধারণা স্পস্ট করার জন্য সম্প্রতি গোদাগাড়ী উপজেলার বড়শীপাড়া গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মতবিনিময় সভায় প্রবীণরা তাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে যে সমস্যায় ভোগেন তা তুলে ধরেন। তারা জানান, এ সময় তাদের চুল পাকে, ত্বকে বলি রেখা দেখা দেয়, চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে যায়, শ্রবণশক্তি কমতে থাকে, খাবারে রুচি কমে আসে, হাড়ের ক্ষয় হয়, দাঁত পড়ে যায়, শরীরের প্রায় সকল অঙ্গে জরা সরা বাঁধে।
পারিবারিকভাবে না পাওয়ার অনেক বিষয়গুলো আক্ষেপের স্বরে তাদের নিকট থেকে উঠে আসে। এ প্রসঙ্গে শতবর্ষী বাদল হাজরা বলেন, “ছেলের বউ যদি আলাদা সংসার করতে চাই কোন বাপ মা তার ছেলের সংসারে অশান্তি দেখবেন। তাই তাদের আলাদা করে দেয়।” অংশগ্রহণকারী অনেকেরই এই রকমের অভিজ্ঞতা আছে। তাদের সন্তানদের সুখের কারণে নিজেরা বণ্টন হয়ে যায় সন্তানদের মধ্যে এ বিষয়ে গোফুর মিয়া (৮৬) বলেন, “সন্তান ২জন থাকলে মা ও বাপকে ভাগ করে দেয় কে কার দিকে খাবে।”
প্রবীণ ব্যক্তিদের আলোচনায় শারীরিক অক্ষমতা ও আর্থিক অস্বচ্চলতার বিষয়টি বারবার চলে আসে। আলোচনায় তাদের শারীরিক অক্ষতার বিষয়ে ওয়বাইদুর রহমান (৭২) বলেন, “আমাদের এই সময় প্রয়োজন যে ঘরের সাথেই টয়লেট এর ব্যবস্থা থাকবে কিন্তু কতজন ঘরের সাথে টয়লেট বানাতে পারছে, পুষ্টিকর খাবার দরকার কতজন পুষ্টিকর খাবার খেতে পারছে।”
সরকার প্রবীণদের জন্য জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩ প্রণয়ন করেছে। প্রবীণদের জন্য ১১টি অধিকার সেখানে উল্লেখ রয়েছে। অধিকারগুলোর বিষয়ে প্রবীণদের সাথে আলোচনায় তারা বলেন, ‘এই নীতিমালা তৈরি করে কি হবে আমি যদি আমার পরিবার,সমাজ, রাষ্ট্র থেকে সেগুলো সুবিধা না পাই।’ প্রবীণ নীতিমালার কয়েকটি বিষয় তাদের জানা থাকলেও ২০১৩ সাথে পিতা মাতার ভরণপোষণ আইন সম্পর্কে তাদের অজানা ছিল। পিতার মাতার ভরণপোষণ আইনের শাস্তির বিধান তিনমাস জেল ও ১ লাখ টাকার জরিমানার বিষয়টি তাদের কাছে পছন্দ হলেও কোন সন্তান তার পিতামাতাকে এই আইনের আওতায় আনতে পারবে বলে তারা বিশ্বাস করেন না।
প্রবীণ ব্যক্তিরা অভিজ্ঞতার কান্ডারী। তারা আমাদের জন্য বোঝা নয়, সম্পদ বটে। আমাদের উচিত তাদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করা যা তাঁরা প্রত্যাশা করে।