নিজের বাল্য বিয়ে ভেঙ্গে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো ফাহিমা আক্তার
মানিকগঞ্জ থেকে আছিয়া আক্তার
শিশু থেকে কৈশর, কৈশর থেকে যৌবন, যৌবন থেকে বৃদ্ধ সব বয়সেই অবহেলিত হয়ে আসছেন নারীরা। যুগ যুগ ধরে বহু উদাহরণ রয়েছে এ অবহেলার। জন্মের প্রথম থেকেই শুরু হয় এ অবহেলা। যখন একজন ছেলে শিশুর জন্ম হয় সাথে সাথে আযান দেওয়া হয়। মিষ্টি বিতরণ করা হয় পাড়ায় পাড়ায়, আনন্দের শোরগোল পড়ে যায় বাড়িতে। আর যখন একটা মেয়ে শিশুর জন্ম হয় তখন থেকেই শুরু হয় অবহেলা, মেয়ের মাকে আতুর ঘরে দেয়া হয় না পর্যাপ্ত খাবার। মেয়ের জন্য বিলানো হয় না মিষ্টি দেয়া হয় না আযান। শিশু বয়স থেকে কৈশরে পার হতে না হতেই দেয়া হয় বিয়ে। যেখানে মেয়েটার হেসে খেলে বেড়ানোর কথা সেখানে শুরু হয়ে গেলো তার সংসার সামলানো। আবার বছর যেতে না যেতেই সে মা হয়। এভাবেই স্বামী, সন্তান ,সংসার নিয়ে একটা গন্ডির ভেতর চলতে থাকে তার জীবন। কোথায় হারিয়ে যায় তার ছেলে বেলা, হাসি-খুশি জীবন। জীবনটাকে বুঝার আগেই ফুরিয়ে যায় তার জীবন। এতটাই ছোট বয়সে বিয়ে দেয়া হয় এসব মেয়েদেরকে, এরা বুঝতেই পারে না যে বাল্য বিয়ে কি এবং এর ক্ষতিকর দিক, আবার কেউ বুঝেও চুপ করে থাকে পরিবারের বয়স্ক মানুষের ভয়ে। কিন্তু চুপ করে থাকেনি ফাহিমা আক্তার।
মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের বায়রা গ্রামের মেয়ে ফাহিমা আক্তার। ফাহিমা বায়রা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ফাহিমার বয়স ১৪ বছর। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ফাহিমা। ফাহিমার বাবার নাম রহিম বাদশা (৫০)। তিনি একজন কৃষক। মায়ের নাম মুরশেদা বেগম (৩৭)। তিনি একজন গৃহিনী। ফাহিমারা চার ভাই বোন, দু’বোন দু’ভাই। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে, ভাই দুটো ছোট আর ফাহিমা ভাই-বোনের মধ্যে মেজো। অতি সাধারণভাবে জীবন কাটাচ্ছে তারা।
এর মধ্যে ফাহিমার বড় চাচার স্ত্রী ফাহিমার জন্য বিয়ের সমন্ধ দেখা শুরু করে দিয়েছে যা ফাহিমা জানেই না। একদিন ফাহিমা স্কুল থেকে আসতে না আসতেই তার চাচি তাকে ডেকে নিয়ে যায়। ফাহিমা গিয়ে দেখে বাড়িতে বেশ কিছু লোক। আর তা দেখে বুঝতে পারে যে ওর বিয়ের কথা চলছে। তখনি ফাহিমা আপত্তি জানায় যে, সে বিয়ে করবে না। কিন্তু কে শুনে কার কথা। তারা নিজেরাই ঠিক করে বিয়ে। আর এ কথা শুনে ফাহিমা বেশ রাগ করে মায়ের সাথে। প্রথমদিকে মা বিয়েতে রাজি হলেও পরবর্তীতে অমত করে। কিন্তু ফাহিমার চাচা চাচি নাছরবান্দা। তারা বিয়ে দিয়েই ছাড়বেন। পরে ফাহিমা পুলিশের ভয় দেখায় এবং বলে যে ‘৯৯৯ এ ফোন করে বলে দিবো আমাকে জোর করে বাল্য বিয়ে দেয়া হচ্ছে।’ পরবর্তীতে একথা শুনে সবাই ভয় পায় এবং বিয়েটা আপাতত বন্ধ হয়।
এখন ফাহিমা নিয়মিত পড়াশুনা করছে। ফাহিমা বলেন, ‘আমি শুধু একাডেমিক শিক্ষার মধ্যেই আবদ্ধ নই। গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক এর বিভিন্ন কর্মসূচিতে যাই এবং জীবন ও সমাজ সমন্ধে অনেক ধারণা পাই। এগুলো আমাকে অনুপ্রাণিত করে। বারসিক কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম ও আছিয়া ও রিনার আপাদের মাধ্যমে আমরা কিশোরীদের ঐক্যবদ্ধ করছি এবং অচিরেই বাল্য বিয়ে রোধসহ সামাজিক বিভিন্ন কাজে অবদান রাখতে কিশোরী ক্লাব করব।’