মানিকগঞ্জে গ্রামীণ নারীদের হাজল মেলা অনুষ্ঠিত
মানিকগঞ্জ থেকে মো. মাসুদুর রহমান
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সাইলকাই গ্রামের নারী সংগঠনের আয়োজনে ওবেসরকারি গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান বারসিকের সহযোগিতায় সম্প্রতি হাজল মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংগঠনের সভানেত্রী রাবেয়া বেগমের সভাপতিত্বে হাঁস ও মুরগী পালনের স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিষয় সম্পর্কে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ঝর্ণা বেগম, বারসিকের কমকর্তা মো: মাসুদুর রহমান ও মো: জামাল হোসেন। আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঘিওর উপজেলার প্রাণী সম্পদ অফিসার ডা. মো. হাবিবুল ইসলাম। তিনি হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল, ভেড়া ও কবুতরের বিভিন্ন রোগের লক্ষণ প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘মানুষের যেমন ৬টি খাদ্য উপাদানের দরকার তেমনি পৃথিবীর সকল প্রণীরই ৬টি খাদ্য উপাদানের প্রয়োজন। পাশাপাশি তাদের অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা ও সেবার প্রয়োজন, আমাদের প্রত্যেকেরই এই মনোভাব থাকা উচিত।’
মেলায় ৪৮ জন নারী তাদের তৈরি হাজল প্রদর্শন করেন। এছাড়া গ্রামের অন্যান্য নারী, কৃষক, যুবক ও তরুণীসহ প্রায় শতাধিক দর্শনাথীর মেলায় আগমন ঘটে। এলাকাবাসী জানান, এই প্রযুক্তির প্রচলন আগে এই এলাকায় ছিল না বারসিকের সহায়তায় এর আগমন ঘটেছে। তবে সম্প্রসারণের জন্য গ্রামভিত্তিক আরো কিছু মেলা আয়োজন করা দরকার। দিন দিন মুরগি পালনের প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে গ্রামের লেবু মিয়া বলেন, ‘মুরগি পালন একটি পুরাতন পদ্ধতি। মুরগি পালন খুবই লাভজনক একদিকে যেমন পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মিটে আবার নারীদের বাড়তি আয়ের একটা উৎস।’ যদিও বিক্রির টাকা কোন না কোনভাবে পুরুষদের হাতে চলে যায়, তবে বাড়তি আয়ের কারণে নারীদের পারিবারিক মর্যাদা বেড়েছে। সবশেষে পুরুস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে মেলার সমাপ্তি ঘটে।
মেলায় আগত নারীরা জানান, তারা বাচ্চা তোলার জন্য মুরগির ডিম পাড়ার মাঝামাঝি সময়ের ডিমগুলো অথাৎ উর্বর ডিমগুলো ফোটানোর জন্য ব্যবহার করে থাকেন। প্রায় সবগুলো ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় কারণ মুরগি বের না হওয়ার কারণে তাপমাত্রা সঠিকভাবে পায় এবং বাচ্চাসহ মুরগি উকুন ও বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয় না। খোলা অবস্থায় ডিম ফোটালে সাধারণত ২১ দিনের মধ্যে তেমন কোন খাবার পায় না, খাবারের জন্য বের হলে ডিমে তা’র পরিমাণ কমে যায়। ফলে অনেক ডিম হতে বাচ্চা বের হয় না, আবার খাবারের অভাবে পুষ্টিহীনতায় দূর্বল হয়ে পড়ে এবং সহজে ডিম দিতে চায় না, বিশেষ করে ২- ৭ দিনের বয়সের বাচ্চা বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়। পক্ষান্তরে হাজল পদ্ধতিতে নিয়মিত খাবার সরবরাহ থাকার কারণে মুরগি সুস্থ থাকায় আবার কিছু দিনপরই মুরগি পুনরায় ডিম পাড়া আরম্ভ করে।
উল্লেখ্য, হাজল হচ্ছে মুরগির ডিম ফোটানোর জন্য ডিমে তা দেওয়ার একটি স্থানীয় প্রযুক্তি যা মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়। খাবারের পাত্র ও পানির পাত্র হিসাবে নারিকেলের মুছি (আইচা) ব্যবহার করা হয়, কোন উপকরণ ক্রয় করতে হয় না। হাজলে খাবার ও পানির ব্যবস্থা থাকার কারণে ডিম ফোটানোর আগ পর্যন্ত মুরগিকে বাইরে বের হতে হয় না। খাদ্য উপাদান ঠিক থাকার কারণে মুরগির ওজন কমে না।