পান সুপারীর ব্যবসায় চলে সংসার
সাতক্ষীরা থেকে ফজলুল হক
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষগুলো পড়েছে চরম বিপদে। বিশেষ করে ২০০৯ সালে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আইলায় কৃষি জমিতে লবণপানি প্রবেশের মধ্যে দিয়ে সব চেয়ে বেড়েছিলো বেকারত্ব। এলাকায় কাজ না থাকায় দরিদ্র মানুষদের যেতে হতো জেলার বাইরে কাজের সন্ধানে। সেখানেও পড়তে হতো নানান বিপাকে। কখনো গিয়ে কাজ হয়না, কখনো খাওয়ার সমস্যা আবার কখনো কাজ করে টাকা সময় মত পাওয়া যায় না। সেই বিপাকে পড়ে যান খাদিজা-রফিকুল দম্পতি।
শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চুনা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা খাদিজা বেগম (৩৫)। স্বামী রফিকুল ইসলাম (৪০) একজন দিনমজুর। কোন জায়গা জমি নেই। খাস জায়গায় বসবাস। খাদিজা রফিকুল দম্পতির দুইটি মেয়ে ও একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
গত আগস্ট ২০২১ সালে বারসিক’র বাস্তবায়নে নেটজ (পার্টনারশিপ ফর ডেভেলপমেন্ট জাস্টিস) এর সহাযোগিতায় বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ (পরিবেশ) প্রকল্পের কাজ শুরু হয় বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে। পরবর্তীতে এলাকা সোশ্যাল ম্যাপিং করার মাধ্যমে জনগোষ্ঠীকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয় (ধনী, মধ্যবিত্ত, দরিদ্র, হতদরিদ্র)। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ খাদিজা বেগমের পরিবারকে হতদরিদ্রের তালিকায় চিহ্নিত করে।
এক পর্যায়ে খাদিজা বেগম চুনার শালিক সিএসও দলের সদস্য হয়। খাদিজা বেগম শালিক সিএসও দলের সদস্য হওয়ার পর সর্ব প্রথম জলবায়ু সহনশীল কৃষি চর্চা বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং নিয়মিত সাপ্তাহিক দলীয় আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন । প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও নিয়মিত আলোচনা পরবর্তী তিনি পান সুপারীর ব্যবসা ও হাঁস, মুরগি পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণ পরবর্তী খাদিজা বেগমকে আয়বর্ধন মুলক কর্মকান্ডের উপকরণ হিসাবে দশ হাজার টাকার সুপারী, দুই হাজার টাকার পান, বাকি টাকায় হাঁস-মুরগি, বীজ ও গাছের চারাসহ মোট ১৩,৫০০ টাকার উৎপাদনশীল সম্পদ দেওয়া হয়।
সেই থেকে খাদিজা বেগমের স্বামী রফিকুল ইসলাম পান সুপারীর ব্যবসা শুরু করে বাজারে বাজারে। প্রতিদিন তিনি আনুমানিক পাঁচশত টাকা আয় করেন। এখন সংসার ভালোই চলছে। পান সুপারী ব্যবসার লাভের টাকা দিয়ে খাদিজা বেগম একটি ছাগল ও একটি রান্না ঘর তৈরি করেছেন। বর্তমানে পান সুপারীর ব্যবসার জন্য পুঁজি আছে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকার মত। খাদিজা বেগমের বড় মেয়ে রহিমা খাতুন (২২) জন্মগ্রহণের পরবর্তীতে যমজ একটি মেয়ে ও একটি ছেলে সন্তান হয়। মেয়ে জান্নাতী (১৬) ও ছেলে রাসেল (১৬)। বর্তমান তারা পড়াশুনা করছে সপ্তম শ্রেণীতে।
খাদিজা বেগম বলেন, ‘এলাকায় তেমন কাজ কাম ছিলো না, অনেক অভাবে ছিলাম। বারসিক থেকে পুঁজি পেয়ে পান সুপারীর ব্যবসা শুরু করে আমরা ভালো আছি। আমাদের বড় স্বপ্ন হলো ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করিয়ে উচ্চ শিক্ষিত করা এবং ভালো একটি পাকা ঘর তৈরি করা।’