ব্যবসা ছেড়ে কৃষিতে মনোনিবেশ করলেন নিজেকে

সাতক্ষীরা, শ্যামনগর থেকে চম্পা মল্লিক
মো: আব্দুল হাই (৫৮)। স্ত্রী: শরিফা খাতুন (৩৫)। মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগর গ্রামে বাস করতেন তারা। পেশায় তিনি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। কসমেটিক্স, হার্ডওয়্যার ও মধুসহ বিভিন্ন ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। তার বাবা, মা, তিন ভাই ও দুই বোনকে নিয়ে বাবার ৩৩ শতক ভিটাতে বসবাস করতেন। ছোট থেকেই নিজের প্রতি আত্মবিশ^াসী ছিলেন আব্দুল হাই। ছুটেছেন প্রতিনিয়ত। নিজের আয়ের টাকা দিয়ে ২০০০ সালে একই ইউনিয়নের কুলতলি গ্রামে ৮২.৫ শতক জমি কিনেছিলেন তিনি। ব্যবসায় যুক্ত থাকলেও কৃষিতে ছিলো বরাবরই তার একটি টান। কিন্তু সকল ভাই বোনদের বিয়ে এবং নিজেদের সন্তান হওয়ার পরে বাবার ছোট ভিটাতে সবজি চাষের মতো সেই পরিবেশ তিনি পাননি। তবে স্বপ্ন দেখতেন সবুজ কৃষির। আর তাই আস্তে আস্তে দূরে সরতে থাকেন ব্যবসা থেকে। তিনি মনে করেন ব্যবসা মানেই মানসিক দুশ্চিন্তা, দৌড়াদৌড়ি ও আর্থিক ক্ষতি। তিনি দেখেন একজন দিমজুর সারাদিনে ৩শ’ টাকা আয় করেন ঠিকই, অথচ বাজার করতে গেলে চাহিদার অর্ধেক জিনিসই তার আর জোটে না।


সবকিছু ভেবে একপর্যায়ে আব্দুল হাই বাবার ভিটা ছেড়ে চলে এলেন ২০১৫ সালে নিজের কেনা জমিতে। সেই সাথে ছেড়ে দিলেন তার ব্যবসা জগৎটাকে। মনোনিবেশ করলেন কৃষিতে। ধীরে ধীরে তিনি তার ভিটাকে সাজাতে থাকেন নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী। তার ভিটাটি বিলের মধ্যে একটি ফাঁকা জায়গায়। তিনি তার ভিটার চারিদিকে কদবেল, নারিকেল, বাতাবি লেবু, মাল্টা, আঁশ ফল, কাগুচি লেবু, আম, জাম, পেয়ারা, জামরুল, সফেদা, তেতুল, পেঁপে, কলা, বরুই আমড়াসহ মোট ১৬ প্রকার ফলের চারা লাগিয়েছেন। একই সাথে তিনি মৌসুমভিত্তিক বিভিন্ন প্রকার সবজি যেমন: বেগুন, আলু, লাউ, টমেটো, কচুরমূখী, তরুল, ঝিঙে, বরবটি, কাঁচামরিচ, লালশাক, পালংশাক, বীটকপি, ওলকপি, মুলা, পুঁইশাক, ঢেঁড়শ, খিরাই ও শসা চাষ করেন। পাশাপাশি তার রয়েছে একটি পুকুর। সেখানে রয়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল, ট্যাবলেট, গ্লাস কার্প। এছাড়াও রয়েছে স্থানীয় জাতের পুঁটি, শৈল, কৈ, টাকি ও মায়া মাছ।


এটুকুতে তিনি থেমে থাকেননি। শুরু করেন ধান চাষও। যা আছে এটুকুর মধ্যে ও বাজারের উপর নির্ভরশীলতা তার আগের তুলনায় অনেক কমছে বলে মনে করেন। তার বাড়িটিকে নানান প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য দিয়ে সাজিয়ে তুলতে চাইলেও তিনি মনে করেন, তিনি যেহেতু ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন সে হিসেবে কৃষিতে তার তেমন কোন অভিজ্ঞতা নেই। আর কৃষিতে অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে তিনি তার ভিটার সব জায়গা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছেন না। নিজের জ্ঞান থেকে যেটুকু জায়গা কাজে লাগাতে পেরেছেন তা থেকে যেভাবে লাভবান হয়েছেন, সেখান থেকে তিনি মনে করেন শুধু সঠিক পরামর্শ পেলেই তিনি আর্থিকভাবে আরো অনেক বেশি লাভবান হতে পারবেন।
তার কাজকে দেখে এই গ্রামের অনেকেই নতুনভাবে কৃষির প্রতি আগ্রহী হন এবং তার মতো করে কাজ করার চেষ্টা করছেন। তিনি চান তার বাড়িটিকে মনের মতো করে সাজাতে। যা দেখে আরো অনেক মানুষ বাঁচার মতো বাঁচতে কৃষিতে ফিরে আসুক। এমন অবস্থাতে বারসিক’র কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা পেয়ে তিনি মনে করেন, তিনি শুধুমাত্র কৃষির মাধ্যমে যে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাচ্ছেন, সেখানে শুধুমাত্র বারসিকই পারে তাকে সঠিক পরামর্শ ও সহযোগিতার মাধ্যমে তার সেই স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌঁছাতে।

happy wheels 2

Comments