পেশা টিকলে বাঁচবে ঐতিহ্য, বাঁচবে সমাজ ও দেশ

সাতক্ষীরার, শ্যামনগর থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
পেশা টিকলে বাঁচবে ঐতিহ্য, বাঁচবে সমাজ ও দেশ। সচল থাকবে দেশীয় আর্থ-সামাজিক অবস্থান। সুরক্ষিত থাকবে প্রাণ ও প্রকৃতি। কিন্তু আধুনিক কৃষির প্রচরণ, অপরিকল্পিত লবণ পানির ব্যবহার ও শিল্পায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের নির্মম প্রভাবে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় পেশাবৈচিত্র্য। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসা নানা পেশা ও ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে সরকারি-বেসরকারী উদ্যোগ প্রয়োজন।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কেন্দ্রে বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) আয়োজিত ‘কেমন আছে উপকূলীয় পেশাজীবী মানুষ’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সংলাপে বাজনদার, জেলে, কামার, কুমার, তাতী, বনজীবী, ঋষি, নাপিত, আদিবাসী, শিউলি, ফড়িয়া, রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, দর্জি, ভ্যানচালক, শাকারী, দিনমজুরী, ফেরিওয়ালা, তৃতীয় লিঙ্গ, ডুবুরি, সুইপার, শিক্ষক, গ্রাম্য ডাক্তার, কবিরাজ, আরির কাজ, ধাত্রী, বেহারা, ভাস্কর, ব্রাহ্মণ, চুনুরী, মাঝি, বাউল শিল্পী নাট্যশিল্পী, কৃষক, ইমামসহ ৩৫টি পেশার মানুষ উপকূলীয় বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, জীবন-জীবিকা, ঐতিহ্য ও আনন্দ-বেদনার মাঝে নিজ নিজ পেশা টিকিয়ে রাখার নানা কৌশল, সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।

শ্যামনগর উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কেন্দ্রের সভাপতি কৃষক শেখ সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও বারসিক কর্মকর্তা বিশ^জিৎ মন্ডলের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বারসিকের ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার।

আলোচনা করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম, শিক্ষক রনজিৎ বর্মণ, সাংবাদিক গাজী আল ইমরান, কৃষক নেতা কুমুদ রঞ্জন গায়েন প্রমুখ।

সংলাপে উপকূলীয় পেশাজীবী জনগোষ্ঠীর বর্তমান জীবনযাত্রা ও সমস্যা-সম্ভাবনার পাশাপাশি পেশা টিকিয়ে রাখতে নানামুখী সুপারিশ করেন। সুপারিশগুলো হলো: গ্রামীণ পেশাজীবীদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সৃষ্টি, প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কমানো, কৃষক পেনশন,পেশাজীবীদের সরঞ্জাম সহায়তা, প্রাকৃতিক জলাশয় উন্মুক্তকরণ, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুঠির শিল্প স্থাপন, সরকারি প্রণোদনা বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান, বিনাসুদে ঋণের ব্যবস্থাসহ সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।

সংলাপে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের বসবাস। দেশের গ্রামীণ পেশাজীবী মানুষকে অর্থনীতির মূল ¯্রােতে আনা জরুরী। সরকার এজন্য বিভিন্ন সময়ে নানা পদক্ষেপ নিলেও তা খুবই অপ্রতুল। প্রতিটি পেশাকে সমান গুরুত্ব দিলে অর্থনীতির চাকা সচল হবে। তাই প্রতিটি পেশার বৈশিষ্ট্য অনুসারে করণীয় নির্ধারণ করা দরকার।

বক্তারা আরও বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির প্রসার ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক পেশাই হারিয়ে যেতে বসেছে। এসব পেশাজীবী মানুষ অন্য পেশার দিকে ধাবিত হওয়ায় নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। চাপ বাড়ছে অন্য পেশার মানুষ ও জীবন-জীবিকার উপর। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। এসব বিষয়ে অতিদ্রুত ভাবা দরকার।

happy wheels 2

Comments