‘মাটির জীবন রক্ষায় আমরা সকলেই দায়বদ্ধ’
মানিকগঞ্জ থেকে সঞ্জিতা কির্ত্তুনীয়া
‘মাটি ও পানি জীবনের উৎস’ এই প্রতিপাদ্যের আলোকে সম্প্রতি বারসিক’র উদ্যোগে বিশ^ মৃত্তিকা দিবস উদযাপিত হয়েছে সিংগাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামে কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দ্রে।
মাটির প্রতি নতুন প্রজন্মের দায়িত্ব, কর্তব্য ও মমত্ববোধ জাগ্রত করতে মাটি ও প্রাণের বিকাশের উপর শিশু কিশোরদের চিত্রাংকনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। তাদের রঙ তুলিতে ফুটে উঠে মাটিতে প্রাণের বিকাশ। এছাড়া অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল মাটির সাথে যাদের আত্মার সম্পর্ক মজলিশপুর, কাশিমপুর, বাঘারচর গ্রামের কৃষক, কৃষাণী ও প্রবীণ ব্যাক্তিবর্গের।
কৃষকরা প্রতিনিয়ত মাটিতে নতুন প্রাণের জাগরণ ও মাটিকে রূপান্তরিত করে তাদের বেঁচে থাকার তাগিদে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার সরবেশ আলী, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী ফেরদৌস এবং বারসিক’র প্রোগ্রাম সমন্বয়ক মাসুদুর রহমান, মাঠ সহায়ক অনন্যা আক্তার ও সঞ্জিতা কির্ত্তুনীয়া। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বারসিক প্রোগ্রাম সমন্বয়ক মাসুদুর রহমান। বিশ^ মৃত্তিকা দিবসে নতুন প্রজন্মকে বিভন্ন ধরণের মাটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে নদীর পলি মাটি, এঁটেল মাটি, দো-আঁশ মাটি, বেলে মাটি, জৈব সার সমৃদ্ধ মাটির প্রর্দশনী করা হয়।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2023/12/image_50732033-1024x423.jpg)
আলোচনায় মজলিশপুর গ্রামের কৃষক হাজী মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘সারা জীবন মাটিতে কাজ করলাম তবে মাটির ও যে দিবস হয় সেটা আগে জানতাম না। বারসিক’র সুবাদে এটা জানতে পারলাম। এই মাটি দিবস থেকে মাটির গুরুত্ব আমাদের বুঝতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বয়স হয়েছে আমরা যখন থাকবোনা মাটিকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমার সামনে উপবিষ্ট এই নতুন প্রজন্মকেই নিতে হবে, ভালো রাখতে হবে মাটিকে। এজন্য মাটি দিবসে ছোটদের অংশগ্রহণ থাকায় খুবই ভালো হয়েছে। কেননা এর পর দায়িত্বটা ওদেরই নিতে হবে।’
বাঘারচর গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, ‘মাটির জীবন রক্ষায় কী কী করতে হবে সে বিষয়ে আমরা আরও জানতে চাই এবং সেগুলো করতে চাই। মাটি আমাদের মা, আমাদের জীবন ও মৃত্যু। তাই মাটিকে আমরা ভালো রাখতে চাই।’ মজলিশপুর গ্রামের কৃষক মোঃ নুরুল হক বলেন, ‘মাটি খাটি। মাটির কাছে আমরা সকলেই ঋণী। তাই মাটিকে আমরা আঘাত করবো না। মাটিকে আমরা সবাই ভালোবাসবো, শ্রদ্ধা করবো এবং মাটির জীবন রক্ষায় সকলেই দায়বদ্ধ থাকবো।’ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী ফেরদৌস বলেন, ‘মাটিরও জীবন আছে মাটির ও স্বাস্থ্য আছে। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় কৃষকদের জৈব সার ব্যবহার করার বিকল্প নেই। বিভিন্ন কোম্পানি কৃষকদের প্রলোভন দেখিয়ে টপ সয়েল কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের কাছে তিনি বিনীত অনুরোধ জানান তারা যেন এই প্রলোভনে রাজি না হন। একবার যদি টপ সয়েল কেটে নিয়ে যায় সেই জমি আর কোনদিন চাষের উপযোগী হবেনা এবং পৃথিবী ধীরে ধীরে মাটি শূন্য হয়ে পড়বে।
সবশেষে উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার সরবেশ আলী বলেন, ‘অতিরিক্ত রাসায়নিক সার বিষ ব্যবহারের ফলে মাটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মাটি ছাড়া কোন প্রাণীর বেঁচে থাকা সম্ভাবনা। তাই মাটি রক্ষায় আমাদের সকলেরই সচেতন হতে হবে। শিশু-কিশোর, নারী, পুরুষ, নবীন, প্রবীণ আমরা সবাই মাটি রক্ষায় সচেতন হবো। সবশেষে এত সুন্দর আয়োজন করার জন্য বারসিককে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান এবং উপস্থিত সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রশংসা জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।’