হরিরামপুরে দিন দিন কমছে ফসলি জমির পরিমাণ
আবিদ হাসান, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর একটি কৃষি সমৃদ্ধ উপজেলা। উর্বর ফসলি জমি ও বৈচিত্র্যপূর্ণ এক কৃষি শস্যের অপূর্ব নীলাভূমি হিসেবে পরিচিত। কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী, হরিরামপুর উপজেলার মোট আয়তন ২৪৮.৯৯ বর্গ কি.মি। আবাদযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ ১৫১৯৪ হে.। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে জেলা এবং হরিরামপুর উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষিজমি। ফসলের মাঠজুড়ে নতুন করে গড়ে উঠছে নতুন বসতি। উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় জমির মালিকেরা জমি ইজারা দিচ্ছেন, এমনকি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকেরা। উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা,কর্মচারিদের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এসব ফসলি জমি উদ্ধারসহ জেগে ওঠা চরে নতুন করে চাষাবাদের। হিমশিম খেতে হচ্ছে উপজেলা প্রশাসনেরও।
অপরিকল্পিত যেখানে সেখানে পুকুর খননে বিপাকে পড়ছেন আশপাশের কৃষক। এছাড়াও ফসলি জমি থেকে মাটি বিক্রয়, অপরিকল্পিত পুকুর খনন, নতুন খামার, জলাশয়, ফসলি জমিতে অপরিকল্পিত ড্রেজিং, ক্ষতিকারক গাছের বাগান (ইউক্যালিপ্টাস গাছের বাগান), সেচ সংকট, কীটনাশক ব্যবহার, অপরিকল্পিত কার্লভার্ট নির্মাণ, নদী ভাঙন, অবৈধ ইটভাটা, নতুন রাস্তা নির্মাণ, বালু ব্যবসার গদি, কৃষি পণ্যের দাম উর্ধগতি, ফসলের ন্যায্য মূল্যের শঙ্কা, কৃষিকাজে লোকসান, সচেতনতা প্রচারণার অভাব, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব, মানসম্মত বীজের সংকট, চরাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার অসুবিধা, ফসল সংরক্ষণাগারের অপর্যাপ্ততা, বাজার মনিটরিং নিয়ন্ত্রণের অপর্যাপ্ততাসহ বিভিন্ন অজুহাতে কমছে ফসলি জমি ও চাষাবাদ। এছাড়াও কিছু জায়গায় আবাসন ও বাণিজ্যিক কাজে ফসলি জমির ব্যবহারকেও দায়ী করছেন অনেকেই।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ফসলি জমির মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা ১৩টি ইউনিয়নেই ব্যক্তিগত প্রয়োজন এবং বিভিন্ন অজুহাত ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ফসলি জমির মাঠ। রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং দালাল চক্রের মাধ্যমে ফসলি জমি ক্রয় করে অনাবাদি করে রাখাও হয়েছে বেশ কিছু জায়গায়। ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ইশাখাবাদ গ্রামের কৃষক লাল মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাদের গ্রামে ফসলি জমি রাতের আধারে পুকুর হয়ে যায়। এইতো সেদিন রাতের আধারে প্রভাবশালীদেও সহায়তায় বেশ কয়েকটি ফসলি জমির মাটি কেটে অন্যত্র বিক্রি করে কিছু অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা। এরা কখনোই কৃষকের কথা চিন্তা করেনা। এরা মাটি খেকো।’ চালা ইউনিয়নের উত্তর চাঁনপুর গ্রামের বাসিন্দা রহিম প্রামাণিক বলেন, ‘আমাদের এই ইউনিয়নে ফসলি মাঠের উপর দিয়ে গত কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকটি নতুন সরকারি রাস্তা হয়েছে। ফসলি জমিতে বেশ কিছু জায়গা ভরাট করে বাড়িও করেছে অনেকে, আর মাটির ব্যবসায়ীরা তো আছেই। কর্মকর্তারা কেন যে ফসলি মাঠের মাঝ দিয়ে রাস্তা নিতে চায়, এটা আমরা বুঝিনা। আমাদের মত তারাও হয়তো বুঝে না বোঝার ভান করে এমনটি করছেন।’
বয়ড়া ইউনিয়নের দড়িকান্দি গ্রামের কৃষক হাবিব জানান, ‘আমাদের এখানে ফসলি জমিতে বেশ কয়েকটি বালুর গদি তৈরি হয়েছে, বেশ কয়েক জায়গায় ফসলি জমিতে পুকুর কাটা হয়েছে, তাছাড়া পদ্মা নদীতে তো ভাঙছেও অনেক জমি, আর বড়লোকেরা বাড়ি করার জন্য জমিও কিনতেছে এখানে। ভবিষ্যতে এভাবে চলতে থাকলে আমাদের অভাবে মরতে হবে।’
উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষক নাসির উদ্দিন জানান, উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন পদ্মার ওপারে চরাঞ্চলেও নদীভাঙন আর নতুন রাস্তাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ফসলি জমি ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও খামার,নতুন বাড়িঘড় নির্মাণ এবং নির্মানে ফসলি জমি ব্যবহারের কারণে কমছে ফসলি জমির পরিমাণ।
হরিরামপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জয়ন্ত পাল মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ- একটুকু জমিও অনাববাদী রাখা যাবে না, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতা, অনাবাদী জমিকে আবাদযোগ্য করে তোলাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি। চারটি ইট ভাটার মধ্যে দুইটি ইটভাটায় পরিত্যাক্ত জায়গায় সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের সফলতা আমরা পেয়েছি, এছাড়াও জেগে ওঠা নতুন চরে বিভিন্ন ফসলের আবাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি আমরা।’