সাহসী ভূমিকায় উৎপলা রানী

সাতক্ষীরা থেকে ফাতিমা আক্তার

নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি, সাহস আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সমাজে নিজেকে একটি আর্থ-সামাজিক অবস্থান তৈরি করা যায়। তার এক অনন্য দৃষ্টান্ত হল প্রান্তিক জনপদের গ্রামীণ নারী উৎপলা রানী। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগরের সুন্দরবন লাগোয়া মাঝের আটি গ্রামে স্বামী সন্তান ও শ্বাশুড়িসহ বসবাস। নড়াইল জেলায় জন্ম হওয়া উৎপলা রানী (৩৪) বিয়ের পর থেকেই স্বামীর অভাবের সংসারে সংগ্রাম করে টিকে আছে।

ইচ্ছা থাকা সত্বেও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করেও আর এগুতে পারেননি তিনি। স্বামীর সংসারে শিক্ষাজীবনের পাঠ চুকিয়ে সংসারের হাল ধরতে হয়। স্বামী স্বপন কুমার মন্ডল (৩৮) পেশায় ভ্যান চালক। বৃদ্ধ শ^াশুড়ি, ৪ বছরের ছেলেসহ ৪ জনের পরিবার কোন রকমে আয় রোজগার করে চলতে থাকে। স্বামীর নিজের সামান্য ৩ শতক জমিতে ঘর বেঁধে বাস করেন। বাড়তি কোন বসতভিটা নেই। এজন্য সংসারের সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজার থেকে ক্রয় করে আনতে হয়।

২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের মাঝের আটি গ্রামে মাছরাঙা সিএসও দলে যুক্ত হন তিনি। যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক আলোচনায় সভায় অংশগ্রহণ করে আসছেন। সমন্বিত দলীয় আলোচনায় সকলের মতামতের ভিত্তিতে নিজের দলের সভানেত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। কিছুদিন পরে বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে উৎপাদনশীল সম্পদ হিসাবে ২টি ছাগল ১টি কদবেল ও পেয়ারার চারা, কিছু বীজ ও দুটি মুরগি সহযোগিতা পান। ছাগপল পালনের পাশপাশি তিনি দিনমজুরের কাজ করে সংসারে স্বামীর পাশাপাশি আয় বাড়াতে থাকে।
উৎপলা ভাবতে থাকেন কিভাবে সংসারের আয় বাড়ানো যায়। তিনি টাকা সঞ্চয় করে একটি সেলাই মেশিন ক্রয় করেন। দর্জির কাজ শেখার পথ খুঁজতে থাকলে বারসিক পরিবেশ প্রকল্পের মাধ্যমে সেই সুযোগ তৈরি হয়। ভোকেশনাল প্রশিক্ষণের অংশ হিসবে তিনি মুন্সিগঞ্জ বাজার থেকে হিরা টেইলার্স থেকে তিন মাসের দর্জি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তিনি বারসিক থেকে প্রায় ছয় হাজার টাকার ছিট কাপড় সহযোগিতা নিয়ে নিজের দর্জি ও ছিটকাপড়ের ব্যবসা শুরু করেছেন।
উৎপলা রানী তার মাছরাঙা দলকে নেতৃত্ব দিয়ে সমাজে একটি ভালো অবস্থান তৈরি করতে চান। যার মাধ্যমে তার সংগঠনের পরিচিতি বাড়বে। সাপ্তাহিক সভা পরিচালনা করা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, রেজুলেশান লেখা ইত্যাদি কাজগুলো তিনি নিজের হাতে শক্তভাবে দায়িত্ব নিয়ে পালন করেন।
উৎপলা রানী বলেন, “আমি বারসিক এ যুক্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে ইউনিয়ন পরিষদসহ নানা ধরনের প্রশিক্ষণ ও সভা সেমিনার অংশ নেওয়ার সুযোগ পাই। যে কারণে আমার সাথে নানা মানুষের পরিচয় হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারী সেবা আদায় করার জন্য বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলতে পারি। এখন অনেক মানুষ আমাকে সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করে। এখাবেই উৎপলা রানী নিজের সাহস আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন।

happy wheels 2

Comments