প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে হচ্ছে
সাতক্ষীরা শ্যামনগর থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
ধারাবাহিক কর্মসূচির আলোকে সাম্প্রাতিক বারসিক’র সহায়তা ও জাওয়াখালী কৃষি নারী সংগঠনের উদ্যোগে কৃষাণী শেফালী বেগমের বাড়িতে এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ জীবনযাত্রার প্রভাব বিষয়ক গ্রাম পর্যায়ে আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়। আলোচনা সভায় জাওয়াখালী গ্রামের স্থানীয় কৃষক-কৃষাণী, শিক্ষার্থী ও বারসিক কর্মকর্তাসহ ২৪ জন নারী ও ৪ জন পুরুষসহ মোট ২৮ জন অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনা সভায় অংশগ্রহনকারীদের নিকট থেকে পূর্বে অর্থাৎ ২০-৩০ বছর আগে শৈত্যপ্রবাহ কেমন ছিলো? বর্তমানে বেড়েছে নাকি কমছে? যদি বাড়ে বা কমে তবে তার কারণ কি? কম বা বৃদ্ধিতে জীবনযাত্রায় কোন প্রভাব ফেলছে কিনা? আর এ সমস্যা সমাধানে কি করা যেতে পারে বলে তারা মনে করেন এসকল বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করা হয়।
আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারী প্রবীণ নারী উম্মতি বিবি, কৃষাণী অনিমা রানী, পারুল রানী ও শিবানীরা বলেন, ‘এখন যতই দিন যাচ্ছে ততই যেন শীতের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। আগেও শীত ছিলো তবে এতোটা না। আগে পৌষ ও মাঘ মাসেও মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হতো কিন্তু তাও যেনো এতো শীত ছিলো না। এখন যেন সব কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। আগে সব কিছু যেন সময় মতো হতো আর এখন কোন সময় লাগছে না কখনো শীত, কখনো গরম, কখনো বর্ষা। হঠাৎ করে যেনো সবকিছু হচ্ছে। এখন আমরা শীত, গরম ও বর্ষা ছাড়া আর কিছু দেখতে পাইনা। যখন শীত তখনই ব্যাপক শীত, আবার যখন গরম তখন যেন ব্যাপক গরম। আবহাওয়া আর আগের মতো নেই।’ তারা বলেন, ‘এখন শীতের মাত্রা বেশি হওয়ার কারণ হলো এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি। লবণাক্ততার কারণে এলাকা থেকে বিভিন্ন ধরনরে গাছাপালা হারিয়ে গেছে, ফসলে জমি কমে গেছে, বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদ হতো তা আর হয়। আগে প্রত্যেক বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা ছিলো এলাকা ছিলো মিষ্টি আবহাওয়া, ধানের বিচালী দিয়ে ঘর ছাউনি হতো। যে ঘরে মীতের সময় গরম থাকতো আবার গরমের সময় ঠান্ডা ছিলো। এখন তো মানুষ বিভিন্ন ধরনের এসির মধ্যে থাকছে আর তখন সে ঘর ছিলো আমাদের এসি ঘর। সবকিছু হারিয়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে হচ্ছে।’
অন্য অংশগ্রহণকারী শেফালী বেগম ও রবীন্দ্র নাথ বলেন, ‘শীতের মাত্রা বেড়ে যাওয়াতে আমাদের জীবনযাত্রায় নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। যারা যোন মজুরি দিই, যারা বাইরে কাজের জন্য যায় তারা কাজে যেতে পারেনা। অনেক পরিবারের শীত বস্ত্রের ও সংকট রয়েছে। মানুষের নানা ধরনের অসুখ বিসুখ দেখা দিচ্ছে। ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন সমস্যা জ¦র, সর্দি, কাশি, গলা ফুলা। এছাড়াও এখন বিশেষ করে প্রত্যেক মানুষের একটা রোগ দেখা দিচ্ছে আর তা হলো হাটুর মালা ব্যথা হওয়া। একবার বসলে আর উঠে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। আর এসকল রোগ শুধুমাত্র মানুষের না গবাদি পশু পাখিরও নানান ধরনের রোগ ব্যাধি হচ্ছে। হঠাৎ করে মোড়ক লাগছে আর সব গবাদি পশু মারা যাচ্ছে। তাছাড়া হাঁস-মুরগির বাচ্চা ফুটানো যাচ্ছে না। যদিও কেউ ফুটাচ্ছে সেক্ষেত্রে অধিকাংশ বাচ্চা মারা যাচ্ছে। এছাড়াও এখন আর ধান ফসল না হওয়াতে প্রায় প্রত্যেক বাড়ির ঘর এ্যালবেস্টার ও টিনের ছাউনি থাকায় প্রচন্ড শীতে মধ্যে পড়তে হচ্ছে। কারণ এ ঘরগুলোতে শীতের সময় খুব শীত আবার গরমের সময় খুবি গরম।’
অংশগ্রহণকারীরা এ সমস্যা সমাধানের জন্য নিজেরা বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও সুপারিশ করেন। তারা মনে করেন এখন বেশি বেশি করে সহনশীল গাছ লাগাতে হবে নিজ বাড়িতে, রাস্তার পাশে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করতে হবে।