বেলি বেগমের বৈচিত্র্যময় কৃষিবাড়ি: একটি সফলতার গল্প
রাজশাহী থেকে সুলতানা খাতুন
পবা উপজেলার দর্শনপাড়া ইউনিয়নের ছোট একটি গ্রাম দিঘীপাড়া। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের সাথে জড়িত। এমনই এক কৃষক পরিবারের সদস্য বেলি বেগম। ৩৭ বছর বয়সী বেলি বেগমের বসতভিটার পরিমাণ ৯ শতক এবং আবাদি জমি ৩৩ শতক। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৪ জন। তার স্বামী পেশায় কৃষক।
বেলি বেগম সংসারের কাজের পাশাপাশি তার বসতবাড়ির আশপাশের জায়গাগুলো ফেলে না রেখে পরিকল্পিতভাবে বৈচিত্র্যময় সবজি চাষ শুরু করেন। শুধু সবজি চাষেই থেমে থাকেননি, দেশীয় ফল উৎপাদন, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি পালনেও মনোযোগ দেন। বর্তমানে তার বাড়িটি “বৈচিত্র্যময় কৃষিবাড়ি” হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বিয়ের পর আর্থিক অনটনে থাকা বেলি বেগম নিজের বাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গায় সবজি চাষ শুরু করেন। প্রথমে শাকসবজি উৎপাদন, এরপর কাঁথা সেলাই, ছাগল এবং হাঁস-মুরগি পালন শুরু করেন। এসব কাজ থেকে পাওয়া আয় তার পরিবারের অভাব দূর করতে সাহায্য করে।
২০২০ সালে বারসিক দিঘীপাড়া গ্রামে তাদের কার্যক্রম শুরু করলে বেলি বেগমের সাথে সংস্থাটির পরিচয় হয়। বারসিকের পরামর্শ ও সহযোগিতায় তিনি আরও পরিকল্পিতভাবে বিষমুক্ত ও জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেন। বর্তমানে পুঁইশাক, লালশাক, পালংশাক, লাউ, লেবু, কাঠুয়া ডাঁটা ইত্যাদি শাকসবজি ও ফল বিক্রি করে তিনি ভালো আয় করেন।
বেলি বেগম তার উৎপাদিত ভালো মানের সবজি থেকে বীজ সংগ্রহ করেন। এই বীজ নিজের ব্যবহারের পাশাপাশি প্রতিবেশীদের সাথেও বিনিময় করেন। তার বাড়িটি এখন “বীজ বাড়ি” হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে।
বেলি বেগমের খামারে ১টি ছাগল, ৮টি রাজহাঁস, ২০টি পাতিহাঁস এবং ৫৫টি দেশি জাতের মুরগি রয়েছে। এগুলোর আয়ও তার সংসারের সচ্ছলতায় অবদান রাখছে। বারসিক তার এই উদ্যোগকে “মডেল শতবাড়ি” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
গ্রামের মানুষ এখন বেলি বেগমের পথ অনুসরণ করছে। রহমত উল্লাহ নামে এক কৃষক জানান, “বেলি বেগমের কাছ থেকে আমরা শিখেছি কীভাবে পরিকল্পিতভাবে কৃষি কাজ করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে আয় করা যায়।” বেলি বেগম বলেন, “বারসিকের সহযোগিতায় বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করতে পেরেছি। প্রতিবেশীদের সাথে বিনিময় এবং বাড়তি আয় সংসারের কাজে লাগাতে পারছি। আমার উদ্যোগ অন্য নারীদেরও উৎসাহিত করছে।”
বেলি বেগমের এই সাফল্য বৈচিত্র্যময় কৃষি ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।