গৃহীনি থেকে কৃষক: পারিবারিক কৃষিতে সফল কৃষক রাহেলা

মানিকগঞ্জ থেকে শিমুল বিশ্বাস
জীবনের প্রয়োজনে রাহেলা আজ গৃহীনি থেকে কৃষক। বিষমুক্ত প্রকৃতিনির্ভর কৃষি পদ্ধতি অনুশীলনের করে তিনি এলকায় একজন আদর্শ কৃষক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন। ভূমিহীনের তালিকায় থাকা সিংগাইর উপজেলার নয়াবাড়ি গ্রামের ৪২ বছর বয়সী কৃষক রাহেলা। সরকারি পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় প্রাপ্ত ১০ শতাংশ জমিতে বাড়ি করে স্বামী ও ২ সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন তিনি।
এক সময় রাহেলার পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস্য ছিলো দিনমুজুর স্বামী চাঁন মিয়া। অভাব অনটন ছিলো তার নিত্যসঙ্গী। রাহেলা বেগমের মনে করেন যে, সংসারের অনটন দূর করতে সহায়তা করেছে তার নিজস্ব পরিচালনাধিন পারিবারিক কৃষি খামার। বর্তমানে তিনি পারিবারিক কৃষি খামার থেকে বছরে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আয় করতে পারছেন।


সম্প্রতি কৃষক রাহেলা বেগমের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় জানা যায় যে, তিনি তার বসতবাড়ির আঙ্গিনা এবং পালানী জমিতে বছরব্যাপী চাষ করেন লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শিম, বরবটি, ধুন্দল, করোলা, চিচিংগা, পুইশাক, ঢেড়শ, লালশাক, বেগুন, মরিচ, ডাটা, বিলাতি ধনিয়াসহ বৈচিত্র্যময় ফসল। এ সব বৈচিত্র্যময় ফসল তার পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণসহ ফিরিয়ে দিয়েছে আর্থিক সচ্ছলতা। কৃষি ফসল উৎপাদন ছাড়াও তিনি হাস, মুরগি, গরু, ছাগল ও কবুতর পালনে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। রাহেলা বেগম বলেন, “আমার স্বামী একজন দিনমজুর। তার যে আয় তাতে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার কেনা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি নিজে ফসল উৎপাদন করি বলেই নিজে ও স্বামী সন্তান সবাই প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার খেতে পারি। তাছাড়া বাড়তি ফসলগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে চলতি বছর প্রায় এক লাখ টাকা আয় করেছি। শুধু বিলাতি ধনিয়ার পাতা বিক্রি করেছি ২৫ হাজার টাকা। হাঁস- মুরগির ডিম এবং গাভীর দুধও নিয়মিত বিক্রি করে অনেক টাকা আয় করেছি।”


তিনি আরো জানান যে, বছরের ছয় মাস বাজারের মাছ কম কিনতে হয়। কারণ বাড়ির সামনে মাইঠালে (ছোট গর্ত) তিনি দেশী জাতের মাছ চাষ করেন। এ মাছ তিনি ছয়মাস খেতে পারেন। ফসল চাষে ব্যবহার করেন গরুর গোবর দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট ও স্তুপ কম্পোস্ট এবং বালাই দমনে ব্যবহার করেন বাসি ছাই, নিমপাতা, মেহগনি ফল, গো চুনা নানাবিধ প্রাকৃতিক উপাদান। যে কারণে তার ফসলের উৎপাদন খরচও আনুপাতিক হারে কম লাগে। শুধু রাহেলাই না, এলাকার জয়তুন বেগম, কমলা বেগম, আনোয়ারা, সুফিয়া, সাদিয়া সালমা, সালেহা, শেফালীসহ অনেকেই পারিবারিক কৃষিতে সফল হয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই পারিবারিক পুষ্টিার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।


২০১৩ সালে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র সহযোগিতায় সংগঠিত নয়াবাড়ি আদর্শগ্রাম কৃষক কৃষাণি সংগঠনে নিয়মিত সদস্য হিসাবে যুক্ত হন কৃষাণি রাহেলা। এখন পর্যন্ত তিনি উক্ত সংগঠনের একজন নিয়মিত সদস্য। বেসরকারী সংস্থা বারসিক’র উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে আয়োজিত প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদনির্ভর তথা কৃষি প্রতিবেশবিদ্যা বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করেন এ কৃষাণি। প্রশিক্ষণলদ্ধ জ্ঞানের য॥থাযথ প্রয়োগ করেন পারিবারিক কৃষি খামারে। কৃষি কাজে তিনি বাজারের কোন উপকরণ ব্যবহার করেন না। তিনি নিজস্বভাবে সংগৃহীত বীজ, জৈব সার এবং প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে বালাই দমনের মাধ্যমে নিরাপদ ও বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদন করেন। প্রতিটি ফসলের বীজ সংরক্ষণ করেন তিনি।


রাশেদা বেগম মন্তব্য করেন, “পারিবারিক কৃষি কাজের সফলতার ক্ষেত্রে বারসিক’র যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। সংগঠনের মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রশিক্ষণ থেকে আমি কৃষিতে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের ধারনা ও উৎসাহ লাভ করি। প্রকৃতির সব উপকরণ ব্যবহার করে কৃষি কাজ করে, একদিকে আমার উৎপাদন খরচ কমেছে অন্যদিকে নিরাপদ বিষমুক্ত খাবার পাচ্ছি। যা আমার পারিবারিক আয় বৃদ্ধি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করছে।”

happy wheels 2

Comments