বৈচিত্র্যময় ফসল চাষ নিরাপদ খাদ্য যোগান দেবে
সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে বিউটি সরকার
বেড়েছে খাদ্য উৎপাদন, কমেছে খাদ্যের গুণগত মান। তাই নিজে যতটা পারা যায় উৎপাদনের যুক্ত থেকে নিরাপদ খাদ্য তৈরি করাই শ্রেয়। এ কথা এখন সকলেই স্বীকার করেন বা মনে করেন। তবে বাণিজ্যিকভাবে ফসল উৎপাদকারী কৃষক বিষয়টা মনে করলেও মেনে নেয় না। ফলে বাজারে মেলে না নিরাপদ খাদ্য। তাই অনেকে মনে করেন বসতবাড়ির অব্যবহৃত জমিটির কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য সংকট কিছুটা কমানো যেতে পারে। এই ধারণা নিয়ে সিংগাইর উপজেলার জামালপুর গ্রামের ফিরোজ হোসেন বসতবাড়ির অনবাদি জমির সঠিক ব্যবহার করে নিরাপদ খাদ্য সংকট নিরসনের চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি তার বাড়ি পরিদর্শন করে দেখা যায় বাড়ির আঙ্গিনা সহ আশের পাশের পালানি জমিতে চাষ করেছেন বৈচিত্রময় ফসল। ৫৬ বছর বয়সী এ কৃষক প্রায় ৪০ বছর ধরে কৃষি কাজের সাথে যুক্ত।
তবে কৃষি কাজের সাথে যুক্ত হওয়ার শুরুটা তার মোটেও সুখকর ছিলনা। ফিরোজ হোসেনের বাবা মো. জালাল হোসেন ছিলেন বায়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান পিতা তার ৬ ছেলের মধ্যে ৫ ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত করলেও শুধু ফিরোজ হোসেনকে নিযুক্ত করেন কৃষি পেশায়। বাবার নির্দেশে দশম শ্রেণী পযর্ন্ত লেখাপড়া করার পর কৃষিকে পেশা হিসাবে নিয়ে আজও সক্রিয়ভাবে নিযুক্ত রয়েছেন। জামালপুরসহ আশেপাশের গ্রামে তিনি একজন আদর্শ কৃষক হিসাবে পরিচিত। এখন কৃষিই তার পেশা, কৃষিই তার নেশা। এ পেশার আয় থেকেই ৩ সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বিয়ে দিয়েছেন বড় মেয়েকে। পারিবারিক নিরাপদ খাদ্য সংকট নিরসন ও পুষ্টির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বসতবাড়ির ১৫ শতাংশ জমিসহ মোট ৪০ শতাংশ জমিতে চাষ করছেন বরবটি, টমেটো, উস্তা, ডাটা, লালশাক, পালংশাক, পুইশাক, লাউ, বেগুন, মরিচ, পেপে, সীম, মিষ্টিকুমড়া, বাধাকপি, চালকুমড়া, ধনিয়া সরিষা, হলুদ সহ নানান বৈচিত্রময় ফসল। এছাড়া বাড়ির পাশে ৭ শতাংশ জমি খনন করে চাষ করছেন দেশীয় মাছ। তার এ ধরনের উদ্যোগ দেখে সিংগাইর উপজেলা কৃষি বিভাগ বাড়িয়ে দিয়েছে সহযোগিতার হাত।
এক আলাপ চারিতায় ফিরোজ হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার সব ভাইয়েরা চাকুরি করে। কেউ বিদেশে আছে। আমি শুধু কৃষি কাজ করি। প্রথমে কৃষি কাজ খারাপ লাগলেও এখন ভালো লাগে, বাজার থেকে কোন প্রকার সব্জি কিনে খেতে হয়না। নিজের হাতে বিষমুক্ত সব ধরনের ফসল ফলাই, নিজে খাই প্রতিবেশীদের দেই, এতে মনে শান্তি পাই, কৃষিই আমার পেশা, কৃষিই আমার নেশা।’ তিনি আরো বলেন, ‘বসতবাড়িতে বৈচিত্র্যময় ফসল চাষ পারিবারিক নিরাপদ খাদ্য সংকট ও প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণে কার্যকরী অবদান রাখতে পারে।’