একটি শহর কেমন হওয়া উচিত তা আগে পরিকল্পনা করতে হবে- ড. আদিল মোহাম্মাদ খান
ঢাকা থেকে হেনা আক্তার রুপা, রুনা আক্তার ও পূজা রানী মন্ডল
বারসিক’র উদ্যোগে সম্প্রতি লালমাটিয়ার এনজিও ফোরাম ট্রেনিং সেন্টারের কর্মী পর্যায়ে দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালায় বারসিক ঢাকা কর্মএলাকার কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সহায়ক হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় এব ং ঢাকার প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, উন্নয়নকর্মী, জেন্ডার বিশেষজ্ঞগন। তিনব্যাপি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় জেন্ডার, জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ু দূষণ, বাসযোগ্য আবাসন, রিফেøক্সসোলজি, ইয়োগাসহ নানান বিষয়ের উপর সেশন নেওয়া হয়।
প্রশিক্ষণের প্রথম দিনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য, রেখা সাহা জেন্ডার সমতা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি ছেলে ও মেয়ে শিশুর পার্থক্য, জেন্ডার ভূমিকা, জেন্ডার সমতা, নারীর ক্ষমতায়নসহ আলোচনা করে বলেন, ‘আস্তে আস্তে মানুষ যখন বড় হতে থাকে তখন তার পোশাক, খেলনা ও কাজের ধরন দেখে ছেলে ও মেয়ের পার্থক্য বোঝা যায়। ছেলেদের বাইরের জগৎ দেখতে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তুু মেয়েরা বড় হতে থাকে এবং তারা বাইরের জগৎ থেকে বঞ্চিত হয় এবং সকল সুবিধা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। জেন্ডার বৈষম্য নিরসন করার জন্য সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে। ধারণার ক্ষেত্রে প্রথমে পরিবর্তন আনতে হবে। জেন্ডার সংবেদনশীল হতে হবে।’ ২য় সেশনে স্টামফোর্ড ইউনিভারসিটি অধ্যাপক কামরুজাম্মান মজুমদার বায়ু দূষণ ও তার প্রভাব সম্পর্কে বলেন, ‘বাইরের ধুলাবালি বাতাসের সাহায্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থনে যায়। জুন-জুলাই মাসের বায়ু সব থেকে ভালো থাকে। বায়ূ দূষণ উৎসগুলো হলো-রাস্তা খনন, নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহকারী, যানবাহন, আন্তঃরাষ্ট্রিক দূষণ, গৃহস্থালী এবং রান্নার চুলার দূষণ ইত্যাদি।’ ৩য় সেশনে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ আদিল মোহাম্মাদ খান নগর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘শহরে বাস করতে হলে বাসযোগ্য শহর তৈরি করতে হবে। একটি শহর কেমন হওয়া উচিত তা আগে পরিকল্পনা করতে হবে। ঢাকার যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেই সমস্যাগুলোর দিকে নজর দিতে হবে।’
প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় দিনে ১ম সেশনে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ মোঃ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি দ্বন্দ্ব ও সংর্ঘষ নিরসন আলোচনা করে বলেন, ‘দ্বন্দ্ব হলো সামাজিক অবস্থা। দ¦ন্দ্ব সংঘাতপূর্ণ হতে পারে আবার সংঘাতবিহীন হতে পারে। এটি দ ব্যক্তিগত ও সামাজিক হতে পারে। প্রতিদিন ঢাকা শহরে মানুষ আসে বস্তিগুলোতে সেখানে দেখা যায়, তারা সকল কিছু যেমন-গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ এর চাহিদায় যখন আঘাত লাগে তখন দ্বন্দ্ব তৈরি হয় এবং এ থেকে সংঘাতময় নানান ঘটনা ঘটেই থাকে।’ ২য় সেশনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গবেষক রাকিবুল রনি নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা নিয়ে সেশন পরিচালনা করেন। তার সেশনের মূল বিষয় ছিলো শিল্প সাহিত্য থেকে নগর পরিকল্পনার রূপটি তুলে ধরা। তিনি বলেন, আমাদের দেশের উন্নয়ন হয় কিছ’ মানুষের জন্য, সবার জন্য না। নগর পরিকল্পনা করার সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে খেলার মাঠ, হাসপাতাল, হাট-বাজার কোথায় থাকলে সকল মানুষের উপকার হবে এবং সকল সুযোগ সুবিধা পাবে কী না সে বিষয় মাথায় রাখতে হবে।’
কর্মশালার তৃতীয় ও সমাপনী দিনে ১ম সেশনে জলবায়ু সংকট মোকাবেলা ও শহরের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক ডঃ নিলোপল অদ্রি। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন হাজার বছর ধরে আসছে কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এটি অতিমাত্রায় বাড়ছে। কল কারখানা যত কয়লা পুড়ছে তত বেশি কার্বন নির্গমণ বাড়ছে। বাংলাদেশ সব থেকে বিপদাপন্ন অবস্থায় আছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সাইক্লোন, লবণাক্ততা, বন্যা, খরাসহ নানান দুযোর্গ বেড়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের বড় শহরগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্বিতীয় ও শেষ সেশন থেকে হারমনি ট্রাস্টের পক্ষ থেকে দিনব্যাপী সেশন পরিচালনা করেন সৈয়দা শাহিদা সুলতানা ইলোরা। তিনি দিনব্যাপী ইয়োগা, রিফ্লেক্সোলজি, আমাদের নগর জীবনের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা ও জীবন প্রণালী নিয়ে সেশনগুলো পরিচালনা করেন।’