কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা চর্চা নিশ্চিত করেই খাদ্য সার্বভৌমত্ব অর্জন করতে হবে
ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর কুমার সরকার
বারসিক’র উদ্যোগে সম্প্রতি মানিকগঞ্জ কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা, জলবায়ু ন্যায্যতা ও খাদ্যসার্বভৌমত্ব বিষয়ে পাচঁ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালায় কৃষিপ্রতিবেশীয় বারসিক মানিকগঞ্জ অঞ্চলের স্টাফরা অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণে প্রকৃতি পাঠের মধ্য দিয়ে স্বাগত শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আঞ্চলিক সমম্বন্নয়কারী বিমল চন্দ্র রায়।
কর্মশালায় মাঠ পরিদর্শনের মাধ্যমে এলাকার কৃষিপ্রতিবেশ কেমন আছে সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছেন অংশগ্রহণকারীরা। কর্মশালার প্রশিক্ষকগণ জানান, কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা মূলত বিজ্ঞান সম্মতভাবে স্থানীয় জ্ঞান ও চর্চাকে প্রাধান্য দিয়ে চাষাবাদে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ও চক্রকে সমুন্নত রেখে খাদ্যসার্বভৌমত্ব অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা প্রাণবৈচিত্র্যনির্ভর বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষিপদ্ধতি ও খাদ্যব্যবস্থাপনা, যা কৃষক, কৃষি-শ্রমিক, প্রান্তিক উৎপাদক জনগোষ্ঠি এবং ভোক্তার নিজস্ব খাদ্য- সংস্কৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ খাদ্যউৎপাদন ও খাদ্যগ্রহনের অধিকার এবং সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়াকে গুরত্ব প্রদান করে। একই সাথে কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা বিকল্প কৃষিচর্চা প্রকৃৃৃৃতি পরিবেশ সুরক্ষা ও গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য পরিচালিত সামাজিক- রাজনৈতিক আন্দোলন ও বটে।
কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দ্রে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষণের জন্য ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নের গাংডুবী (নতুন পাড়া) গ্রামে মোঃ রফিকুল ইসলাম রফিকের (৪১) বাড়ি পরিদর্শন করেন ৬ অংশগ্রহণকারী। সারাদিন তাঁর বাড়ি পর্যবেক্ষণ, আলোচনা ও প্রশ্নের মাধ্যমে বাড়ির ভিতরের ও গ্রামের সামাজিক ও প্রাকৃতিক সম্পদের সম্পর্ক খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন পরিদর্শনকারীরা।
কৃষিবাড়িতে প্রশিক্ষণার্থীর দল কৃষি ফসল, বাড়িতে শস্যফসলের তালিকা, পুষ্টি তালিকাসহ সার্বিক কৃষিব্যবস্থাপনা ও কৃষিপ্রতিবেশীয় পরিস্থিতির তথ্য জানার চেষ্টা করেন। তাঁর বাড়ি থেকে উৎপাদিত ফসল, পুকুরের মাছ, মাংস সংগ্রহ করে রান্না করেন, বাড়ির ফল সংগ্রহ করেন, অচাষকৃত উদ্ভিদ সংগ্রহ করেন এবং কৃষকের সাথেই কৃষকের বাড়িতে সারাদিন অতিবাহিত করেন। বাড়ি থেকেই সবজি মাছ, মাংস, লাকড়ি, মসলা সংগ্রহ করে রান্না করে প্রশিক্ষণার্থীর দল দুপুরের খাবার খেয়ে আসেন।
রফিকুল ইসলাম ৫৫ শতাংশের পালনি জমিসহ নিজস্ব বাড়ি, ১০ বিঘা কটে রাখা জমি নিয়ে কৃষিচাষ করছেন। তিনি বাড়িতে জৈব বালাই সংগ্রহ করে রেখেছেন, বাড়িতে কেচোঁ সার আছে। বাড়িতে সোলার ব্যবহার করেন। বাড়িতে ড্রামে ও কলসে সবজির বীজ সংগ্রহ করে রেখেছেন, তিনি বিশ^াস করেন মাটি, পানি, বাতাস তিন টি মৌলিক উপাদান ভালো থাকলে প্রাণের অস্তিত্ব টিকে থাকবে। তার গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ক্ষিরাই নদী, তিনটি খাল ও বেশ কয়েকটি পুকুর ও বট গাছ রয়েছে যেগুলো তার এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস।
রফিকুল ইসলামের বাড়ির ভিতর আছে নারিকেল, সুপারি, আম, বেল, তেতুঁল, রড়ই, কাঠাঁল, জাম্বুরা, নিম গাছ, মেহগনি, গাবগাছ, বৈন্ন্যা গাছ, ডুমরা গাছ, কদবেল গাছ, সাজনা, বাঁশ, বেত, কামরাংঙ্গা,পানগাছ, শর্শা, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, লাউ, পেয়াঁজ, মরিচ, মূলা, টমেটো, করলা, পুঁইশাক, লাল শাক, ওল কচু, দুধ কচু,কালো কচু, কেপসিক্যাম, বটবটি, শ্রীচন্দন ইত্যাদি। এসব প্রাকৃতিক সম্পদকে কেন্দ্র করেই তাঁর জীবন ও জীবিকা চলছে।