হেকিম ধান কৃষকের মন জয় করেছে
নেত্রকোনা থেকে মো. অহিদুর রহমান
কৃষকের বীজ কৃষকের সম্পদ। এই বীজ কৃষকের গোলা ঘর থেকে কোম্পানির প্যাকেটে স্থান পেয়েছে। কৃষকের কাছে এখন আর বীজ নেই। মৌসুম এলেই কৃষক হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকেন ডিলারের কাছে দোকানের দোয়ারে দোয়ারে। কৃষকের এই বীজ সমস্যা সমাধানের জন্য ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের সাধুপাড়া কৃষক সংগঠনের সভাপতি আ. হেকিম বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র সহযোগিতায় ধানের জাত গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেন।
বীজের সমস্যা সমাধানের জন্য সাধুপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হেকিম গত ২০০৯ সালে শুরু করেছিলেন কৃষক নেতৃত্বে ধানের জাত গবেষণা। কৃষক আব্দুল হেকিম একজন মাটি ও মানুষের কৃষক। ছোটবেলা থেকেই কৃষি কাজের সাথে জড়িত। তাঁরই বাছাই করা হেকিম ধানটি। মাঠ থেকে একটি ধানের শীষ আলাদাভাবে দেখতে পান। তিনি সেই ধানের শীষ সংগ্রহ করে চাষ করেন। পাঁচ বছর ধরে চাষ করে ্এখন ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার সাধুপাড়া, নগুয়া, তারাটি, খিচা, কোদালিয়া, চরফরিদপুর, গজহরপুরসহ ১১টি গ্রামে ৯৪ জন কৃষক হেকিম ধান চাষ করছেন। প্রতি দশ শতাংশে ধানের ফলন হয়েছে প্রায় ৭ মণ।
তাছাড়া এ অঞ্চলে গত বছরগুলোতে গবেষণার মাধ্যমে ২২টি স্থানীয় ধানের জাত মনগির, তিলবাজাই, তুলসিমালা, সোহাগ, রতিশাইল, কালোজিরা, সুবাশ, মরিয়ন, সতিন, বিরই, অগনঢেপি, ভূইট্টা আইজংসহ ২২টি জাত নিয়ে গ্রামের কৃষকদের নেতৃত্বে প্রায়োগিক ধানজাত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেছিলেন কৃষক আ: হেকিম। সেই ২২টি জাতের মধ্যে ভালো ফলন, ধান গাছ হেলে পড়েনা, ধানের ওজন বেশি এসব বৈশিষ্টের ভিত্তিতে কৃষকরা এলাকা উপযোগি হেকিম, মালশিরা, কাবুনডুলান, বিরই, রতিশাইল, তিলবাজাই ধান চাষের জন্য পছন্দ করেন। ধানের জাতগুলো এলাকার জন্য উপযোগি হিসেবে নির্বাচন করেন।
২০১৯ সালের আমন মৌসুমে গ্রামের ১৭ জন কৃষক তাদের জমিতে পৃর্থক পৃর্থকভাবে আ: হেকিমের ধান চাষ করে ভালো ফলন পান। দিন দিন কৃষকের কাছে মালশিরা ধানের চাহিদা বেড়ে যায়। ২০২০ সালের আমন মৌসুমে কৃষক আবুল হেকিম ১২০ শতাংশ জমিতে হেকিম ধান চাষ করলে ধানটি গ্রামের কৃষকদের নজর কাড়ে। ২০২৩ সালে আমন মৌসুমে আশুজিয়া, চরফরিদপুর,খিচা, নগুয়া, তারাটি, খিচা, কোদালিয়ার গ্রামের আ. লতিফ, হকমিয়া,আ.বারি, এমদাদ, হুমায়ুন কবীর, হেলাল,কালাম, দুলাল, জিয়াউদ্দিন শহীদ মিয়া, নজরুল ইসলাম, ইব্রাহিমসহ ৯৪ জন কৃষক ২৩৬০ শতক জমিতে হেকিম ধান চাষ করেন। এলাকার অনেক কৃষক এবছর হেকিম ধান চাষ করে অধিক ফলন পেয়ে অনেক খুশি। তারাটি গ্রামের কৃষক নজরুর ইসলাম বলেন, ‘আমি ৩০ শতাংশ জমিতে ২০ মন ধান পাইছি। ধান ঝরে পড়েনা, ফলন ভালো, ধানের বাজার মূল্যও ভালো, ভাত খাওয়ার জন্য উপযোগি, আমার কাছ থেকে আরো ৪ জনে ধানের বীজ চাইছে’্।
হেকিম ধান কৃষকের কাছে ছড়িয়ে পড়–ক। কৃষক যেমন বীজের জন্য এখন সম্পূর্ণভাবে বাজারের উপর নির্ভরশীল সেই জায়গা থেকে আ: হেকিম কৃষকদের মতো কৃষকের চেষ্টায় ও বিনিময়ের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সকল কৃষক ও কৃষক সংগঠনের মাঝে জাগ্রত হোক তবেই কৃষক তার বীজের অধিকার ফিরে পাবেন। কৃষকেরা ধানের এই বাছাই পদ্ধতির মাধ্যমে নিজেদের বীজের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন। কৃষক নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করতে পারবে এবং কৃষকদের বাজারের নির্ভরশীলতা কমে আসবে।