‘গোবর সারে জমি ভালো থাহে ফসলও ভালো হয়’
হরিরামপুর থেকে মুকতার হোসেন
‘হরিরামপুর চর এলাকা সবাই হগলতি কৃষি কাম করি। আমাগো হগলতির বাড়িতে গরু বাছুর আছে। গরুর গোবর জমিতে দেই। জমি ভালো থাহে (থাকে) ফসলাদি ভালো হয়। আবাদ বসত করতে আমাগো খরচাদি কম হয়।’ কথাগুলো বলেছেন হরিরামপুর চরাঞ্চলের উত্তর পাটগ্রামচরে বাড়ী ৫২ বছর বয়সের কৃষক আইয়ুব আলী। তিনি আরও বলেন, ‘আমরাতো আগে জমিতে সার বিষ দিতাম না। কেনা সার আমরা ব্যবহার করতাম না। বাড়ির আলানে পালানে শাক সবজি চাষ করতাম। ক্ষেত খামারে আউশ আমন ধান চাষ হতো। খরচ অনেক কম হতো খেতেও অনেক স্বাদ ছিল। কিন্তু বর্তমানে সব জায়গায় অতিরিক্ত সার বিষ দিয়ে ফসল উৎপাদন করার কারণে নিরাপদ খাদ্য খাওয়া আমাদের জন্য অনিশ্চয়তা হয়ে পড়েছে।’
কৃষক আইয়ুব আলী জানান, হরিরামপুর চরাঞ্চলে আবাদী জমিতে তারা গোবর সার ব্যবহার করেন। চরাঞ্চলের কৃষকরা বাড়ির আঙ্গিনার পাশে গর্ত করে গরুর গোবর সংরক্ষণ করেন। গোবর ছাড়াও বাড়ির তরকারী কাটাকুটা, ময়লা আর্বজনা রেখে দিয়ে গোবর সার তৈরি করেন। ৬ মাস রাখার পর তারা জমিতে ব্যবহার করেন। গম, কালাই, সরিষা, শাকসবজি চাষে গোবর সার ব্যবহার করে থাকেন। কম্পোষ্ট গর্ত থেকে বস্তায় তুলে ঘোড়ার গাড়িতে জমিতে ছিটিয়ে দেন। তারপর সার জমিতে চাষ দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেন। গোবর সার ব্যবহারের কারণে জমিতে মাটির গুনাগুণ যেমন ভালো থাকে, তেমনি ফসল ভালো হয়।
হরিরামপুর চরাঞ্চলে প্রতিবছর ফসলী জমিতে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার কারণে মাটিতে পলি পড়ে। সেই কারণে ফসল ভালো হয়। বারসিক চরাঞ্চলের কৃষকরা যাতে কম খরচে এবং নিরাপদভাবে খাদ্য উৎপাদন করতে পারে তার জন্য সহায়তা করে যাচ্ছে। কৃষকদের মাটির গুনাগুণ রক্ষা, জৈব বালাইনাশক তৈরি ও ব্যবহার, কম্পোষ্ট ্এবং ভার্মি কম্পোষ্ট সার তৈরি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় আইপিএম এবং আইএফএম স্কুল তৈরিতে সহায়তা প্রদান করা হয়।
লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে কর্মরত কৃষি উপসহকারি মোশারফ হোসেন বলেন, ‘চরাঞ্চলের কৃষকদের পিট কম্পোষ্ট সার তৈরি ও ব্যবহার বিষয়ক আরো প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কৃষকদের আরো দক্ষ করা যেতে পারে। যেমন কম্পোষ্ট গর্তের উপর শেড দেওয়া, তাপমাত্রা ঠিক রাখা, মাঝে মাঝে সার কোদাল দিয়ে উলট পালট করে দেওয়া। যাতে গোবর সারের গুণগত মানটা ঠিক থাকে। গোবর সার ব্যবহারের মাধ্যমে মাটির জীব অণুজীব বেঁচে থাকতে সহায়তা করবে এবং কৃষকদের ফসল উৎপাদনে সাশ্রয়ী হবে।’