চিত্রাংকনে চরের শিশুদের শহীদ দিবসের শ্রদ্ধা
হরিরামপুর, মানিকঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
সবার হাতে খাতা কলম আর রঙ পেন্সিল। মনের মাধুরী দিয়ে অংকন করছে তাদের গ্রামের দৃশ্য। সচরাচর গ্রামের চারপাশ দিয়ে শিশুরা যা দেখতে পায় সেই দৃশ্যগুলো তাদের চিত্রাংকন ছবির মাধ্যমে ফুটে উঠে। চরের এই কোমলমতি শিশুদের চিত্রাংকনে উঠে আসে, গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদী, জেলেরা নৌকা দিয়ে মাছ ধরছে। চকে (চড়ায়) গরু ঘাস খাচ্ছে। বাড়িতে বাড়িতে সৌর বিদ্যুৎ, রাস্তায় ঘোড়ার গাড়ি, কলা গাছ, নৌকা, মাছ, কাঁচা রাস্তা এই দৃশ্যগুলো শিশুরা ছবি অংকনের মধ্যে দিয়ে উঠে আসে। অমর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ দিবস ও মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে হরিহরদিয়া শিক্ষা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য র্যালি ও মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়। তারপর শিক্ষা কেন্দ্রের ৪০ জন কোমলমতি শিক্ষার্থী রঙ পেন্সিল, খাতা আর কলম হাতে এই চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। গভীর মনোযোগ সহকারে আঁকল তাদের নিজ গ্রামের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং এ ছাড়াও চরের মানুষের জীবন জীবিকার সাথে যুক্ত রয়েছে এমন সবকিছুই।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইউপি সদস্য সেকেন আলী, সমাজ সেবক আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার সাবেক কাউন্সিলর ই্কবাল খাঁন এবং শিক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষক মশিউর রহমান (রায়হান)। আলোচনায় ইউপি সদস্য সেকেন আলী বলেন, “চরের শিশুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দূরে হওয়ার কারণে ছোট ছোট শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না। তাছাড়াও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি খাল পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। আবার বর্ষাকালে ৩ মাস পানি থাকার কারণে বন্ধ থাকে। ফলে লেখাপড়ার অনেক ব্যাহত হয়।” এই শিক্ষা স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি সরকারি স্কুলের পাশাপাশি গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করেন।
হরিহরদিয়া শিক্ষা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কয়েকজন ছাত্র রোমান, আবদুল্লাহ, শাকিল, রিতা, রিয়া, রাজু, কাজলি ও তানিয়া তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা ‘শহীদ দিবস’ ও ‘মাতৃভাষা দিবস’ এর নাম এর আগে কারো কাছ থেকে শোনেনি। পাশাপাশি এই উপলক্ষে কোন অনুষ্ঠান অংশগ্রহণও করেনি। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এই প্রথম তারা অংশগ্রহণ করল। কোমলমতি চরের এই শিশুদের আনন্দ-উল্লাসের মধ্যে দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি একদিকে যেমন শ্রদ্ধা নিবেদন করছে অপরদিকে নিজ এলাকার বৈচিত্র্যের প্রতি তাদের ভালোবাসা উজ্জীবিত হয়েছে।