প্রতিবন্ধী ব্যাক্তি আশারাফ আলীর স্বপ্ন
সাতক্ষীরা থেকে ফজলুল হক
বিশেষভাবে সক্ষম আশারাফ আলী (৫৭) ৩৫ বছর আগে শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়ার ইউনিয়নের হাওলভাঙি গ্রাম থেকে সাতক্ষীরায় এসেছিলেন। তার বাবা মহব্বত চাষবাদ করতেন। ৫ ভাই ছিল তার। এত বড় সংসার, কাজ না থাকা, খাবার সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জারিত ছিল। নিজেদেরও কোন জায়গা জমি ছিল না, থাকতেন নদীর চরে, জীবনে দেখেছেন প্রকৃতির দূর্যোগের ভয়ানক প্রতিচ্ছবি, প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করতে করতে হাপিয়ে ওঠা জীবনটা অতিষ্ট হয়ে উঠছিল।
আর তাই বাধ্য হয়ে তিনি শহরমূখী হয়েছেন। এখন থাকেন সাতক্ষীরা শহরের পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের সুলতানপুর বস্তিতে। বিয়েও করেছেন, ২ ছেলে ও স্ত্রীকেকে নিয়ে ছোট সংসার, কিন্তু নিজে প্রতিবন্ধী হয়েও নানা প্রতিকূলতার মধ্যে সংসার চালাচ্ছেন, ২ ছেলেকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। তার বড় ছেলে নাজমূল একাদশ শ্রেণীতে ও ছোট ছেলে শাহিনুর ২য় শ্রেণীর ছাত্র। বিশেষভাবে সক্ষম আশারাফ আলী পেশা এখন বাদাম বিক্রি করা। বাদাম বিক্রির জন্য ছুটে বেড়ান শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। প্রতিদিন ১৫০০-১৬০০ টাকার বাদাম বিক্রি করেন তিনি। তা থেকে তার প্রতিদিন ২০০-৩০০ টাকা লাভ হয় তা দিয়ে কোন মতে চলে সংসার। এই সামান্য লাভের মধ্যেই সন্তানের পড়ালেখা, সংসার খরচ, ঘরভাড়া, চিকিৎসা নানা রকম খরচ বহন করতে হয়।
আশারাফ আলী থাকেন সূলদতানপুর বস্তিতে। অন্যের জায়গায় চটের বেড়া আর বস্তার ছাবড়া দিয়ে নিজে ঘর বানিয়ে মাসে ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে থাকেন সেখানে। কিন্তু নানা সমস্যায় জর্জারিত বস্তিটি নেই পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, নেই স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা, নেই স্বাভাবিকভাবে চলাচলের জায়গা, নেই বিনোদনের কোন ব্যবস্থা। আর এর মধ্যে চলছে তার সংগ্রামী জীবন।
কিন্ত আশারাফ আলীর স্বপ্ন দেখেন স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করার। নিজের সন্তান দুটিকে মানুষের মতো করে ভালোভাবে জীবনযাপন করতে চান। চান নিজে সংগ্রাম করে এক টুকরো জমি কিনতে চান। সেখানে থাকবে পরিচ্ছন্নতা ঘর,স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও পরিচ্ছন্নতা পরিবেশ গড়ে তুলতে চান। কিন্তু আশারাফ আলী জানেন না তার এই স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা। তারপরও দেখেন তিনি স্বপ্ন।
এটা গেল তার স্বপ্নের কথা। কিন্তু আশারাফ আলীর আর গ্রামে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। কারণ গ্রামে তার কোন কিছু নেই। তার এক অবলম্বন হলো বস্তি। তাই আশারাফ আলী বস্তিটি তার স্বপ্নে মত দেখতে চান বর্তমানের। তার বস্তি পরিচ্ছন্ন পরিবেশ,স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, গোসল ও খাওয়ার জন্য বিশুদ্ধ পানি থাকুক। কিন্তু এগুলোর কোন কিছুই নেই তার বস্তিতে। তাই এই স্বপ্নটি শুধু আশারাফ আলীর একার নয় ,এটা বস্তির প্রত্যেকটি মানুষের।