বিনা চাষে সরিষা চাষ: বড় বিলের কৃষকদের সাফল্যের গল্প
রাজশাহী থেকে সুলতানা খাতুন
রাজশাহীর পবা উপজেলার দর্শনপাড়া ইউনিয়নের বিলনেপালপাড়া গ্রামের বড় বিলের কৃষকরা আমন ধান কাটার পর বিনা চাষে সরিষা চাষে চমকপ্রদ সফলতা অর্জন করেছেন। ২০১৮ সালে বারসিকের সহযোগিতায় রবি মৌসুমে সরিষা, মসুর, ও খেসারি চাষের জন্য চাষী ক্লাবের সদস্যদের বীজ সরবরাহ করা হয়েছিল।
প্রথম উদ্যোগ ও সাফল্য
প্রথমদিকে ৫-৬ জন কৃষক ৬-৭ বিঘা জমিতে সরিষা বুনে ৩-৪ মণ ফলন পান। কৃষক বেলাল হোসেন জানান, “প্রথমবার চাষ না করেই সরিষা বুনে ভালো ফলন পাই। তবে বিল ফাঁকা থাকার কারণে গরু-ছাগলের সমস্যা কিছুটা বেশি হয়।” তিনি আরও বলেন, ধান কাটার পর জমি প্রস্তুত করতে দেরি হলে, ধানের মধ্যেই সরিষার বীজ ছিটিয়ে দেন। এতে আলাদা কোনো চাষ, পানি বা অতিরিক্ত পরিচর্যা করতে হয় না। সরিষা চাষের পর সময়মতো বোরো ধান রোপণও সম্ভব হয়।
ক্রমবর্ধমান আগ্রহ
কয়েকজন কৃষকের সফলতা দেখে অন্যান্য কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পরের বছর ১৫ জন কৃষক ২০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেন। এভাবে প্রতিবছর জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে বড় বিলের প্রায় ৮০% জমি, অর্থাৎ ৩০০ বিঘা জমিতে বিনা চাষে সরিষা চাষ করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সুবিধা
- বিনা চাষে সরিষা চাষে প্রতি বিঘায় খরচ হয় মাত্র ১০০০-১৫০০ টাকা।
- সরিষার ফলন থেকে কৃষকরা প্রতি বিঘায় ১০-১২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন।
- জমি বেশি চাষ করতে না হওয়ায় মাটির উর্বরতা বজায় থাকে।
- ফাঁকা জমি ব্যবহারের ফলে কৃষকরা বাড়তি আয় করছেন এবং বোরো ধান সময়মতো লাগানো সম্ভব হচ্ছে।
বড় বিল থেকে আশেপাশের এলাকায় সাড়া
শুধু বিলনেপালপাড়ার বড় বিলেই নয়, দর্শনপাড়া ইউনিয়নের অন্যান্য গ্রাম এবং আশেপাশের এলাকাগুলোতেও এই পদ্ধতি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে।
বারসিক ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর যৌথ উদ্যোগ
বারসিক এবং বিলনেপালপাড়া গ্রামের জনগোষ্ঠীর যৌথ প্রচেষ্টায় এই উদ্যোগটি দারুণ সফলতা পেয়েছে। যদিও বিনা চাষে সরিষা চাষের ধারণা নতুন নয়, বড় বিলের কৃষকদের জন্য এটি একটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধান করে এ উদ্যোগ কৃষকদের জন্য স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করেছে।