সাম্প্রতিক পোস্ট

সাহিদা সুলতানার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

সাতক্ষীরা থেকে মহিরঞ্জন মন্ডল
সমাজ সংস্কৃতি ও পারিবারিক উন্নয়নের সাথে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা নিজেদের সংগ্রাম সাহস আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছেন। সময়ের সাথে সাথে নারীরা নিজের গৃহস্থালী কাজের পাশাপাশি পরিবারের অর্থনৈতিক কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে উন্নয়নের সহযাত্রী হয়ে ভূমিকা পালন রেখে চলেছেন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি গ্রামের সাহিদা সুলতানা (৩২) তেমনই একজন আত্মপ্রত্যয়ী নারী। স্বামী ও দুই সন্তানসহ ৪ সদস্যের ছোট্ট সংসার তার। স্বামী গাউসুল গাজী (৩৮) পেশায় দিনমজুর। দুইটি মেয়ে একজন ৮ম শ্রেণীতে পড়ালেখা করে অন্য জন ১ম শ্রেণীতে। নিজেরা খাস জমিতে বসবাস করলেও বসতঘরের সামনে যেটুকু জায়গা আছে সেইটাকে চাষ উপযোগী করে মৌসুমভিত্তিক নানা জাতের কৃষি ফসল উৎপাদন করে সংসারের আংশিক চাহিদা পূরণ করে সাহিদা সুলতানা। কিন্তু বাকি অংশ নির্ভর করতে হয় পুরোপুরি বাজারের উপর। অভাবের মধ্য থেকে নিজেই খুঁজতে থাকে নানা ধরনের আর্থ-সামাজিক মুক্তির পথ। যুক্ত হয় বারসিক’র সাথে।

২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডেভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি গ্রামে “বকুল” সিএসও দলে যুক্ত হয় সাহিদা সুলতানা। যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক দলীয় আলোচনায় সভায় অংশগ্রহণ করেন। কিছুদিন পরে বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে তার পারিবারিক ও ব্যবসায়িক উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে উৎপাদনশীল সম্পদ হিসেবে একটি সেলাই মেশিন ও একটি ভেড়া সহযোগিতা করা হয়।

পরিবেশ প্রকল্প থেে সুলতানাকে একই সাথে একটি কদবেল ও সবেদার চারা, কিছু বর্ষাকালীন বীজ ও দু’টি হাঁস সহযোগিতা পান। এরপর বারসিক’র নিয়মিত আলোচনা, প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগিতায় তিনি নিজেকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করার সুযোগ পান। সেলাই মেশিনের কাজ তার আগে থেকে শেখা ছিল, কিন্তু সংসারে অভাব অনটনের কারণে সেলাই মেশিন কেনার সামর্থ্য তার ছিল না। ফলে প্রকল্প থেকে সেলাই মেশিন সহযোগিতা পাওয়ার পরে সেই মেশিনে দর্জি কাজের অর্ডার নিয়ে তৈরি পোশাকের মজুরির মাধ্যমে নিজের আয়ের চাকা কিছুটা সচল হয়। গ্রামের মানুষ তার কাছে আসে পোশাক তৈরি করে নেওয়ার জন্য। এভাবে দৈনিক কাজের মাধ্যমে তার আয় বাড়তে থাকে। এখন তিনি তার নিজের বাড়িতে সেলাই মেশিনের কাজ করেন এবং গ্রামের মানুষের কাছ থেকে দর্জি কাজের অর্ডার নিয়ে কাজ করতে থাকেন। গ্রামের মানুষও তার কাছে ভালোই কাজের অর্ডার দেয়। অন্যদিকে তার একটি ভেড়া থেকে তিনটি ভেড়া হয়। এভাবেই দু’টি বিষয়ের বদৌলতে তার দৈনিক আয় বেড়ে যায়। তিনি তার আয়ের টাকা সংসার চালানোর পাশাপাশি মেয়ে দুটিকে ভালোভাবে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করতে চান।

সাহিদা সুলতানা এ বিষয়ে বলেন, “স্বামীর একার আয়ে বর্তমান সময়ে টিকে থাকা কষ্টকর। তাই সংসারের আয় বাড়ানোর জন্য নানা ধরনের কাজ করি। বিশেষ করে সেলাই মেশিন ও ভেড়া পালন করে আয় করছি। আমি বারসিক থেকে সেলাই মেশিন ও ভেড়া সহযোগিতা নিয়ে আমার পরিবারটা সুন্দরভাবে চালাতে পারছি।’

সাহিদা সুলতানার মত এমনিভাবে উপকূলীয় অঞ্চলের নারীরা নিজেদের আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ভিন্ন ভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও আত্মপ্রত্যয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বপ্ন জয়ের আশায় কঠোর দায়িত্ব পালন করছেন।

happy wheels 2

Comments