সবজি বিক্রেতা মাহফুজা’র স্বপ্ন
সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল
সমাজ সংস্কৃতি তথা পারিবারিক আয় বৃদ্ধি ও সামগ্রিক উন্নয়নের পারস্পারিক সারথী হয়ে পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভূমিকা রাখছেন নারীরা। পারিবারিক স্বচ্ছলতার লক্ষ্যে মাহফুজা খাতুন স্বামীর সাথে সংগ্রাম করে চলেছেন নিরন্তর। স্বামী ও স্ত্রী দুজন মিলে বাজারে সবজির দোকান দিয়ে দেখেছেন লাভের মুখ।
‘সবজির দোকান দিয়ে আমরা এখন ভালো আছি। আগে অনেক কষ্টে দিন পার করতাম। এখন আমরা চাদনীমুখা বাজারে স্থায়ী সবজির দোকান দিয়েছি। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই দোকানে সবজি বিক্রি করি। সপ্তাহের দুই দিন নওয়াবেকী বাজার থেকে সবজি কিনে আনি।” কথাগুলো বলছিলেন দোকানে অবস্থানরত স্বামী স্ত্রী দুজনেই।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চাদনীমুখা গ্রামের মাহফুজা খাতুন (৩৮)। দিনমজুর স্বামী মাহফুজ খাঁকে (৪৫) নিয়ে একই এলাকার চাদনীমুখা বাজারে একটি ছোট টং ঘর বেঁধে স্থায়ীভাবে সবজির দোকান দিয়েছেন তাঁরা। বাড়ির পাশে হওয়াতে রাতে অবিক্রিত মালামাল বাসায় এনে রাখতে পারেন। আর সকাল হলেই আবার নানা পদের সবজি পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রির আশায়। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়াতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা বিক্রি হয়।
২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ পার্টনারশীপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে গাবুরা ইউনিয়নের চাদনীমুখা গ্রামে কাঠেশ^র সিএসও দলে যুক্ত হয় মাহফুজা। দলে যুক্ত হওয়ার পরে বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে পারিবারিক উৎপাদনশীল সম্পদ হিসাবে সবজির দোকানের জন্য উপকরণ, একটি কদবেল ও পেয়ারার চারা, কিছু বীজ ও দু’টি হাঁস সহযোগিতা পান। পরিবার উন্নয়ন পরিকল্পনায় এবং ব্যবসায়িক উন্নয়ন পরিকল্পনায় তিনি উল্লেখ করেন যে, সবজির দোকান করলে লাভবান হতে পারবেন। এজন্যই তাঁর পারিবারিক উন্নয়নের জন্য বারসিক থেকে সবজির দোকানের সহযোগিতা করা হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে দোকান থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০০- ৬০০ টাকা আয় হয় বলে তারা উল্লেখ করেন। তাদের একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন একই ইউনিয়নের মধ্যে। দোকানের আয় থেকে দুজনের সংসারে সামান্য কিছু টাকা ব্যয় করে অবশিষ্ট টাকা সঞ্চয় করে পাশের প্রতিবেশীর ২ বিঘা জমি ধান চাষের জন্য ভাগে নিয়েছেন। নিজেদের মাত্র ৪ শতক জমিতে নিজের বসতঘর ছাড়া আর কিছুই না থাকলেও চেয়ারম্যান মহোদয়ের প্রায় ১২ শতক জমিতে বৈচিত্র্যময় সবজি চাষ করেন। তাতে পরিবারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অতিরিক্ত সবজি বিক্রি করে পরিবারের কাজে ব্যয় করেন।
মাহফুজার স্বামী মাহফুজ খাঁ জানান, “আমি আগে ইটের ভাটা করতাম কিন্তু সেখানে গিয়ে অনেক টাকা ক্ষতি করেছি। খুব অসহায়ভাবে দিন চলছিল। ঠিক সেই সময়ে বারসিক থেকে আমি সবজি ব্যবসার সহযোগিতা পাই। আমার বিপদের সময় পাশে দাঁড়ানোর জন্য বারসিককে অনেক ধন্যবাদ।”
মাহফুজা খাতুনের কাছে তাদের এই ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা স্বামী ও স্ত্রী দু’জন মিলে ব্যবসাটি পরিচালনা করি। যে সময়ে যে সবজি বাজারে চলমান থাকে সেগুলো আমরা দোকানে তুলি, অনেক সময় কিছু সবজি নষ্ট হয়। তুলনামুলক যেগুলো খারাপ বা নষ্টের পথে সেগুলো আমরা পরিবারে খাই।”
পারিবারিক উন্নয়নের স্বামী ও স্ত্রী দুজনকে সমানভাবে দায়িত্ব নিতে হয় তার উজ্জ্বল উদাহরণ। মাহফুজা খাতুন দম্পতি নিজেদের সংগ্রাম ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনার কৌশল কাজে লাগিয়ে পারিবারিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন, যা কিনা তাদের পারিবারিক আয় বৃদ্ধিসহ সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।