নেতৃত্ব বিকাশ সংগঠন ও নেটওর্য়াক তৈরি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ঢাকা থেকে হেনা আক্তার রুপা
বারসিক’র উদ্যোগে সম্প্রতি ঢাকায় কাপ কনফারেন্স রুমে নেতৃত্ব বিকাশ সংগঠন ও নেটওর্য়াক তৈরি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানের ২০ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। নারী, পুরুষ, কিশোর কিশোরীসহ কমিউনিটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রশিক্ষণে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।


প্রশিক্ষণের শুরুতে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করেন বারসিক’র সহযোগী সমন্বয়ক ফেরদৌস আহমেদ। শুরুতেই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে তাদের স্থানীয় সমস্যা চিহ্নিতকরণ একটি গ্রুপ ওয়ার্ক করা হয়। সেশন থেকে বস্তির নানাবিধ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়। এরপর সংগঠন, নেতৃত্ব, সমস্যা সমাধানে সংগঠন ও কোয়ালিশনের করণীয় বিষয়য়ে গ্রুপ ওয়ার্ক ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বারসিক’র পরিচালক সৈয়দ আলী বিশ^াস ও বস্তিবাসী অধিকার সুরক্ষা কমিটির সহসভাপতি হারুন অর রশিদ প্রমূখ।


ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘নি¤œ আয়ের মানুষেরা জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানাবিধ সংকটে পড়ে ঢাকা শহরে এসে বসবাস শুরু করেন । এই সংকট মোকাবেলায় প্রতিনিয়ত তাদের লড়াই সংগ্রাম করতে হয়। এই লড়াই যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে টিকে থাকার, ঠিক একইভাবে দারিদ্র ও বৈষম্যের হাত থেকে নিজেরদের রক্ষা করার জন্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা শহরে যে সকল মানুষ বস্তিতে বসবাস করে তাদের সংখ্যা প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ। এই মানুষেরা হাজারো পেশায় নিয়েজিত। কিন্তু তাদের জীবন ও জীবিকা ভয়াবহ সংকটের মধ্যে নিপতিত। আর অন্যতম প্রধান কারণ হলো তারা সংগঠিত নন। তাদের সংগঠিত করার জন্য কাজ করা জরুরি। নি¤œ আয়ের মানুষদের নিয়ে সংগঠন ও তার বিকাশ অত্যন্ত জরুরি।’


বারসিক’র পরিচালক সৈয়দ আলী বিশ^াস প্রশিক্ষণে নেতৃত্ব ও তার বিকাশের জন্য কি করণীয় সে বিষয়ে সেশন পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো মানুষ একত্রিত হলে সংগঠিত হওয়া যায়। আমাদের দেশে যারা নি¤œ আয়ের মানুষ তারা সংগঠিত না। যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে ফলে তারা সংগঠিত হতে পারেন না। সংগঠন তৈরি করতে হলে ৩টি বিষয় থাকতে হবে। আমরা যারা এক সাথে থাকি তাদের সকলে একত্রিত হতে হবে, যারা একই ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করে, আর সেই সাথে যারা মনে করে তাদের সকল সমস্যা সমাধান হওয়া দরকার। তারাই আসলে সংগঠিত হতে পারবে। একজন ভালো সংগঠক পারে সবাইকে সংগঠিত করে লক্ষ্যে পৌছাতে সংগঠন তৈরি করতে।’


বস্তিবাসী নেতা হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমরা বস্তিবাসীরা যুগের পর যুগ অবহেলিত ও নির্যাতিত কারণ আমরা সংগঠিত না। আজ বারসিক আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠিত হবে হবে একটি বাসযোগ্য নগর গড়ে তোলার জন্য। যেখানে নি¤œ আয়ের ও উচ্চবিত্তরা সমান মর্যাদা নিয়ে বসবাস করতে পারে। আমাদের আবাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা ও যাবতীয় মৌলিক অধিকার আদায়ে লড়াই সংগ্রাম জারি রাখতে হবে।’


আসমা বেগম বলেন, ‘ছেলেরা মেয়েদের ইভটিজিং করে। ছেলেদের বাড়িতে বিচার নিয়ে গেলে ছেলেদের পরিবার বলেন, গাছে বড়ই থাকলে ঢিল মারবেই। এসব কারণেই যৌতুক দিয়ে মেয়েদের বাল্য বিবাহ দিতে বাধ্য হই।’
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা তাদের সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি তা সমাধানের জন্য একটি আন্দোলন কর্মসূচিও প্রস্তুত করেন। তারা কাদের কাছে কি কি প্রস্তাবনা তুলে ধরবেন তাও চিহ্নিত করেন। দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ শেষে বছরব্যাপী একটি কার্য তালিকা প্রস্তুত করা হয়। প্রশিক্ষণে আরও উপস্থিত ছিলেন বারসিক’র সহকারী কর্মসূচী কর্মকর্তা হেনা আক্তার রুপা, কমিউনিটি ফ্যাসিলিটেটর রুনা আক্তার, পূজা রানী প্রমূখ।

happy wheels 2

Comments