‘বই পড়লে জগত চেনা যায়’
রাজশাহী (তানোর) থেকে অসীম কুমার সরকার :
‘পড়েছি শতাধিক গল্প, উপন্যাসের বই। বই পড়লে জগত চেনা যায়।’ কথাগুলো অকপটে বললেন তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া বাজারের চা দোকানি বাবু দাস। ১৯৭৮ সালে পবা উপজেলার বাগধানী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন তিনি। কিন্তু এখনও তিনি কবিতা আবৃত্তি, গান ও বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসেন। পঁতাল্লিশের কোঠায় বয়স ছুঁই ছুঁই বাবু জানান, ১৫ বছর বয়সে তিনি ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুরের এক লাইব্রেরিতে এক টাকা জমা দিয়ে বই তুলে পড়তেন। সেখান থেকেই তাঁর শরৎ চন্দ্রের ‘দেবদাস, দত্তা, মেজদিদিসহ বেশকিছু বই পড়েছেন। এছাড়া তিনি সমরেশ মজুমদারের ‘গর্ভধারিণী’ বুদ্ধদেব গুহের ‘বাবলি’, হুমায়ুন আহম্মেদের ‘নন্দিত নরকে’ সহ একাধিক লেখকের বই পড়েছেন।
বর্তমানেও তিনি সময় পেলে দোকানে বসেই বই পড়েন। বই তার কাছে পরম বন্ধু। গাছ ও বই কখনও শক্র হতে পারে না তাঁর বিশ্বাস। তাই বাবু দাস অতি খরা ও অতি বৃষ্টি হওয়াকে গাছ নিধনের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন। পাশাপাশি তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘বর্তমানে ছেলে-মেয়েরা বই পড়ে না। শুধু মোবাইল ও ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত।’ এখনকার ছেলে-মেয়েরা বিপথগামী হওয়ার মূল কারণ হিসেবে তিনি বই না পড়াকে দায়ি করেন।
কর্মব্যস্ততার মাঝেও তিনি এখনও বই পড়েন। বাড়িতে দেখা গেল ট্যাংক ভর্তি বই। তিনি কষ্ট পান তার বই হারিয়ে গেলে। বাবু দাস সর্বদা হাস্যজ্জ্বল এক চা দোকানি। দোকানে সময় পেলে বই পড়েন আর অবসরে বাড়িতে বই পড়তে ভালোবাসেন। বাবু বড় কষ্ট পান এই ভেবে যে, তিনি বেশি পড়াশুনা করতে পারেননি। তবে সন্তানকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন। এক মেয়ে ও এক ছেলের জনক বাবু। মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে আর ছেলের বয়স দুই বছর।
হরেক রকমের বিস্কুট, তার ফাঁকে কলা সাজানো বাবুর দোকান। সকাল ৭টা থেকে রাত্রি ৯টা পর্যন্ত বিরামহীন চলে তার চায়ের দোকান। তার মধ্যে কখনও গান, কখনও কবিতা শুনিয়ে ক্রেতার মন জয় করেন তিনি। চায়ের কাপে হাতের নিপুণ শৈলীতে বাবুর লাল ও দুধ চায়ের বেশ সুনাম রয়েছে ক্রেতার কাছে। আর ক্রেতার সরগরমে সবর হয়ে উঠে গল্প ও আড্ডায় বাবুর চা স্টল।