মমতা দিয়ে নিজের পরিবারকে সাজিয়েছেন মমতাজ বেগম
সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে আছিয়া আক্তার
নেপলিয়ন বলেছিলেন, ‘আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও ,আমি একটি শিক্ষিত জাতি দেব।’ সত্যি তাই। পরিবার, সমাজ ্র রাষ্ট্রকে শিক্ষিত করতে হলেআমাদের একজন স্বশিক্ষিত মা দরকার। একজন স্বশিক্ষিত ‘মা’ই পারে তার পরিবারটাকে সুন্দরভাবে পরিচালিত করতে। এখানে শিক্ষিত বলতে শুধু বড় বড় ডিগ্রী অর্জন করাকে বলা হয়নি। একটি পরিবারে বাবার কাজ থাকে এক বা দু ধরনের আর মায়ের কাজ থাকে শত ধরনের। তাই মাকে হতে হয় সর্বজ্ঞানী/স্বশিক্ষিত। তার চোখ, কান খোলা থাকে সর্বক্ষণ। রান্নার সময় মাকে খেয়াল রাখতে হয়, কে কোন জিনিস খাবে তা রান্না করা, ছেলে মেয়ে কোথায় গেলো, কার সাথে মিশে, পড়াশোনা করছে কিনা? পরিবারে কেউ অসুস্থ হলো কিনা, তার সেবা করাসহ নানান দিক। এমনই এক মমতাময়ী মা হচ্ছেন মমতা বেগম।
মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার পাঁছপাড়া গ্রামের নারী মমতাজ বেগম (৫০)। স্বামী আব্দুল কাদেও (৬২)। মমতাজ বেগম একজন গৃহিনী। ৩ মেয়ে আর এক ছেলে তাদের। দু’মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন । বর্তমানে শ্বাশুড়ি,স্বামী এবং এক মেয়ে আর এক ছেলেসহ পাঁচজনের সংসার তার। পরিবারে তিনিই যেন প্রধান! এমনই এক অবস্থানে বসিয়ে রেখেছেন। তাঁর শ্বাশুড়ি বলেন, ‘আমার ছেলের বউ ছাড়া এই বাড়িটা অন্ধকার।’ তার সন্তানেরা বলেন, ‘আমার মা আমাদের বাড়ির প্রাণ।’ অন্যদিকে তাঁর স্বামী বলেন, ‘মমতা তাঁর মমতা দিয়ে আমাদের পরিবারটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছেন।’
মমতা বেগম সকাল ৪টায় ঘুম থেকে ওঠেন। নামাজ পড়ে শুরু করে তার কাজ। ঘর-ওঠান ঝাঁড় দিয়ে থালাবাসন পরিষ্কার করে, রান্না শুরু করেন। সবাই খাবার খাওয়া হলে মেয়েকে স্কুলে পাঠান, স্বামী আর ছেলে কাজে যান। তিনি যান গরুর জন্য ঘাস সংগ্রহ করতে। প্রতিদিন গরু-ছাগলের জন্য সকাল বিকেল ঘাস আনতে হয়। ৪টি গরু আছে তাঁর গোয়ালে। ছাগল আছে ৫টি। গরু-ছাগল ছাড়াও হাঁস-মুরগি, কবুতর, ঘুঘু পাখিও পোষেণ তিনি। সব কিছুকে খাবার দিয়ে মাঠে ছাগলকে ঘাস খাওয়ার জন্য বেঁধে দেন। তাঁর স্বামী, সন্তানসহ আশি বছরের শ^াশরীও তাকে সাহায্য করেন। প্রতিবছর গরু-ছাগল বিক্রি করে অনেক টাকা আয় করেন তিনি। বর্তমানে তার গরুর গোয়ালে ৫ লাখ টাকার গরু, ৫০/৬০ হাজার টাকার ছাগল এবং ৩/৪ হাজার টাকার হাঁস-মুরগি রয়েছে। তার শ^াশরী বলেন, ‘সারাদিন কাজ করে মেয়েটা। তার সুন্দর পরিকল্পনা আর পরিশ্রমের জন্যই আমাদের বাড়িটা এতো সুন্দর।’