‘প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশকে ধ্বংস করে এমন উন্নয়ন চাইনা’
সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে সঞ্জিতা কির্ত্তুনীয়া ও অনন্যা আক্তার
সম্প্রতি মানিকগঞ্জে বারসিক’র উদ্যোগে নিরাপদ খাদ্য, নিরাপদ স্বাস্থ্য, নিরাপদ আগামীর লক্ষ্যে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মমতাজ সুলতানা, জেলা অতিরিক্ত প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক, জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকতা নুরে আলম সোহাগ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান লক্ষী চ্যার্টাজী, জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শংকর প্রসাদ ভৌমিক, কৃষক লীগের সভাপতি মিজানুর রহমাান নজরুল, শিক্ষক নেতা কমরেড মুজিবুর রহমান মাস্টার ও বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মী।
এছাড়া সংলাপে অংশগ্রহণ করেছেন বিভিন্ন গ্রামের কৃষক, কৃষাণী, যুব উদ্যোক্তা, প্রবীণ সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন, নারী সংগঠন, যুব সংগঠন, পরিবেশবাদী সংগঠন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ, শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথি মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ নিরাপদ খাদ্য, অচাষকৃত উদ্ভিদ বীজ মেলা পরিদর্শন করে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন। সংলাপে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘বাংলাদেশে খাদ্যের নিরাপত্তা অর্জিত হলেও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরা এমন কোন কাজ করবো না যেটা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকর হবে। কারও ক্ষতি না করে যে উন্নয়ন সেটাই টেকসই উন্নয়ন।’ তিনি আরও বলেন, এই মঞ্চে আজ ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন, ব্যবহার, বিক্রি, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বিপনণের অনেক সফলতার গল্প উঠে এসেছে যেটা আগে এতো ছিলনা। এভাবে আপনাদের কাজের মধ্য দিয়েই একদিন নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত হবে।’
এর আগে বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায়ের সঞ্চালনায় এবং সমাজ সংস্কারক এডভোকেট দীপক কুমার ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বারসিক পরিচালক সৈয়দ আলী বিশ^াস। তিনি বারসিক’র পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম এবং কার্যক্রমের উদ্দেশ্য সর্ম্পকে ধারণা প্রদান করেন। তিনি বলেন, ‘কোন প্রাণই এককভাবে বেঁচে থাকতে পারেনা। বেঁেচ থাকতে হলে আমাদের মাটি, পানি, বায়ুসহ পরিবেশের সকল প্রাণকে গুরুত্ব দিয়েই বেঁেচ থাকতে হবে। কেননা আমরা একে অপরের সাথে সর্ম্পকিত।’
সংলাপে প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশের সকল প্রাণের নিরাপদ খাদ্য, নিরাপদ স্বাস্থ্য, নিরাপদ আগামীর লক্ষ্যে বারসিক দীর্ঘদিন ধরে যে সকল কার্যাবলী সম্পাদন করে যাচ্ছে তার ভিডিও ডকুমেন্টরি প্রদর্শন করেন বারসিক প্রোগ্রাম সমন্বয়ক শিমুল কুমার বিশ^াস। জেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটির সভাপতি করম আলী মাস্টার বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও অপরিকল্পিত ইটের ভাটার কারণে কৃষি জমি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে, কৃষকদের খাদ্য যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে এবং কৃষকদের জন্য ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করতে জেলা প্রসাশকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এছাড়াও ভূমি নামজারিসহ বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে হয়রানি থেকে রক্ষা করার আহ্বান জানান। এরপর বিভিন্ন এলাকার উদ্যোক্তা ও কৃষকরা তাদের নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন কৌশল ও সফলতার গল্প সকলের সামনে তুলে ধরেন। বিভিন্ন সংগঠনের সভাপতিগণ প্রাণ ও প্রকৃতি পরিবেশ রক্ষায় যে সকল কার্যক্রম করে যাচ্ছে সেগুলো তুলে ধরেন।
সংলাপের সমাপনী অনুষ্ঠানে এডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ বলেন, ‘জীবনের তাগিদে এবং অর্থনীতিকে সচল রাখতে আমাদের শিল্প কারখানা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার তবে প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশকে ধ্বংস করে কোন উন্নয়ন আমরা চাই না। সকল প্রাণের নিরাপত্তা দিয়ে টেকসই আর নিরাপদ উন্নয়ন চাই আমরা। তাই যখনই দেখবো প্রাণ প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংসাত্মক কোন কার্যক্রম হচ্ছে আমরা রুঁখে দাঁড়াবো, প্রতিবাদ করবো সম্মিলিতভাবে।’