খেলাধুলা শরীর ও মনকে ভালো রাখে
হরিরামপুর থেকে মুকতার হোসেন
খেলাধুলা শিক্ষা কার্যক্রমের একটি অংশ। শরীর ও মন ভালো রাখার জন্য খেলাধুলা করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষেরা হাজারও ব্যস্ততার মাঝেও শরীর ও মনকে চাঙ্গা করার জন্য নিয়মিত খেলাধুলা করেন। খেলাধুলা মানুষের ভেতরে একটি প্রশান্তি এনে দেয়, এনে দেয় ভারসাম্যও। তবে নানান কারণে খেলাধুলার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেছে। শহরে যারা বাস করেন তারা তো খেলাধুলা করার ফুসরতই পান না! অন্যদিকে খেলাধুলার স্থান বা মাঠ যাই বলি না কেন সেগুলোর অভাবে খেলাধুলায় মানুষের অংশগ্রহণের হার কমে গেছে। বাংলাদেশে বিশেষ করে শহরাঞ্চলের অনেক স্কুল ও কলেজে খেলার কোন মাঠ নেই! তাই সে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হয়ে অন্যান্য অপরাধমূলক কাজে (ইভটিজিং, মাদকাসক্ত) নিয়োজিত হয়েছে। এমনকি গ্রামাঞ্চলেও খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হওয়ার হার অনেকাংশে কমে গেছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সাথে শারীরিক শ্রমনির্ভর খেলাগুলো কমে গিয়ে মানুষ বর্তমানে প্রযক্তিগত অনেকগুলো মস্তিষ্কনির্ভর খেলায় মত্ত রয়েছে। এতে করে তারা আত্মকেন্দ্রিক ও সহিংস হচ্ছে। কারণ এসব খেলা বা গেমগুলো সে একাই খেলে এবং খেলা বা গেমগুলো অনেকসময় সহিংসতানির্ভর আধেয় দ্বারা তৈরি। ফলশ্রুতিতে সমাজে আত্মকেন্দ্রিক ও আগ্রাসী মনোভাবে মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এসব প্রযুক্তিগত খেলা আবির্ভাবের সাথে সাথে গ্রাম্য খেলাধুলাগুলোও হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে এখনও অনেকে আছেন যারা ঠিকই শারীরিক শ্রমনির্ভর খেলাধুলা করে থাকেন। খেলার মাঠের অভাবকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তারা ঠিকই খেলার জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজে পান। এরকমই একটি উদ্যোগ সম্প্রতি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপেজলার লেছড়া ইউনিয়নে দেখা গেছে।
হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে পাটগ্রামচরে তরুণরা খেলার মাঠের অভাবকে গুরুত্ব না দিয়ে এলাকার ফসলহীন ক্ষেতগুলোতে আয়োজন করেন ফুটবল খেলা। তরুণদের এ উদ্যোগে সাথে তাল মিলিয়ে এলাকার মাতবর, প্রবীণ, কৃষক, রাজনৈতিক ব্যক্তিগণ এগিয়ে আসেন। লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে একটি উচ্চ বিদ্যালয়, ৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেসরকারিভাবে ৪টি প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। এ সকল শিক্ষা কেন্দ্র প্রায় ২০০০ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। শিক্ষার পাশাপাশি বিনোদনের জন্য বিদ্যালয়গুলো পর্যাপ্ত খেলাধুলা মাঠ না থাকায় চরাঞ্চলের তরুণরা ফসলহীন ক্ষেতগুলোকে ব্যবহার করেছেন খেলার মাঠ হিসেবে। বিশেষ করে বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত যেহেতু এসব ফসলক্ষেত ফাঁকা থাকে সেহেতু ওই সময়টাই তারা এগুলোকে ব্যবহার করেন।
হরিরামপুরের পাটগ্রামচর ও হালূয়াঘাটা গ্রামের তরুণরা পাটগ্রামচর বাজার সংলগ্ন চকে ফুটবল খেলা আয়োজন করেন। এটি শুধুমাত্র একটি টুর্নামেন্ট হিসেবে নয় বরং মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়ন এবং পরস্পরের সাথে বিনোদন ভাগাভাগি করার অভিপ্রায় থেকে আয়োজন করা হয়। এছাড়া এই খেলাধুলা আয়োজন করার আরেকটি উদ্দেশ্য ছিলো মানুষের ভেতরের গ্রাম্য খেলাধুলা ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরা। আয়োজকদের এই উদ্দেশ্য এক অর্থে পূরণ হয়েছে। কেননা বিকালে কাজ কর্ম কম থাকায় খেলার মাঠে দর্শনার্থীর ভিড় জমে। গ্রামের মধ্যে খেলাটি অনুষ্ঠিত হওয়ায় এই বিনোদনে ভাগ বসান নারী-পুরুষসহ অংশগ্রহণ করে প্রায় ৫০০ শতাধিক মানুষ। এমনকি খেলা দেখার জন্য হরিরামপুর থেকে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে অংশগ্রহণ করেন হরিরামপুরের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাশার সবুজ, ইউপি সদস্য নুরুল ইসলামসহ অনেকে।
এরকম খেলাধুলা আয়োজনের উপকারিতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাশার সবুজ বলেন, “পাটগ্রাম অনাথ বন্ধু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে পাটগ্রামে অবস্থিত ছিল। নদী ভাঙনের কারণে বর্তমান বিদ্যালয়টি মুলভুমি হরিরামপুরে অবস্থিত রয়েছে। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে অতিসত্তর একটি খেলার মাঠ ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি।” পাটগ্রামচরের সামছুল হক বলেন, “চরাঞ্চলে খেলার মাঠ না থাকার কারণে বিনোদন থেকে পিছিয়ে পড়ছে। শিক্ষার্থী ও তরুণরা লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা করতে না পারায় বিনোদন থেকে পিছিয়ে আছে। তাই এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়।”