হাওর গুচ্ছ গ্রাম এখন একটি সবুজ গ্রাম
নেত্রকোনা মো. অহিদুর রহমান
হাওরের দুর্যোগ তাদের নিত্যসঙ্গী। বিশাল জলরাশির মাঝে ভাসমান এক দ্বীপের মধ্যে প্রায় ৫০টি পরিবারের ২৩৫ জন মানুষের বসবাস। নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার হাওর অধ্যুষিত একটি ইউনিয়ন গোবিন্দশ্রী। ২০১৯ সালে গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নে দরিদ্র ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি গুচ্ছগ্রাম তৈরি করা হয়।
গুচ্ছগ্রামের ঘরগুলো হস্তান্তরের পর বারসিক গুচ্ছগ্রামের চারাপাশে পরিবেশ উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী বৈচিত্র্যময় ফল ও পানি সহনশীল গাছের চারা রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করে বারসিক। বারসিক’র সহযোগিতায় ২০২০ সালে বন্যা পরবর্তী সময়ে পানিসহনশীল গাছ রোপণ করে নিরাপত্তা বেষ্ঠুনি তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি হাঁস মোরগ পালনের জন্য সহযোগিতা ও উৎসাহ প্রদান করা হেেয়ছে। পরিবারের সদস্যদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে বসতভিটার সামান্য জমিতে সবজি চাষের জন্য বারসিক গুচ্ছগ্রামবাসীদের উৎসাহিত করে এবং গত দুইবছর ধরে শীত ও বর্ষাকালিন সবজির বীজ বিতরণ করা হয় ৫০টি পরিবারে। সবজি বীজ পেয়ে গুচ্ছগ্রামের ৫০টি পরিবার তাদের বসতভিটার সামান্য জমিতে সবজি চাষ করেছেন।
২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে গুচ্ছগ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সকল বসতভিটার চারপাশ, ঘরে চালে, টাওয়ার পদ্ধতিতে বৈচিত্র্যময় সবজি যেমন- লাউ, মূলা, শিম, ডাটা, লালশাক, মিষ্টিকুমড়া, পুঁইশাক, চুকাই, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, বেগুন, পেঁপে, আখ, পাটশাক, ্করলা ইত্যাদি ফসলে ৫০টি পরিবারে বসতভিটা ভরে আছে। গ্রামবাসীরা জানান যে, তারা নিজেদের উৎপাদিত সবজি খাচ্ছেন, বাজার থেকে তাদের কোন সবজি কিনে খেতে হয়না বরং কিছু কিছু সবজি বাজারে বিক্রি করছেন। তারা প্রতিটি সবজির বীজ সংগ্রহ করে রাখছেন নিজ নিজ ঘরে। গুচ্ছগ্রামের নারীরা সবজিচাষ, ফলের গাছ রোপণ করে একটি সবুজ গ্রাম তৈরি করেছেন। গ্রামে এখন আম, জাম, কাঠাল, লিচু, নারিকেল, লেবু, আমড়া, পেয়ারা, পেঁপে, ডালিম, কলা, সুপারি গাছ ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। নিজেদের চাহিদা পূরণ করে পাশের গ্রামের ৩৭ জন নারীকে বীজ প্রদান করেছেন। গোবিন্দ্রশ্রী হাওর বীজ ঘরে সীম, ডাটা, দেশীলাউ, মিষ্টি লাউয়ের প্রায় তিন কেজি বীজ প্রদান করেছেন।
তাঁরা হাঁস, মোরগ, কবুতর, গরু, ছাগল পালন করছেন। এখন সরকারি সেবা পরিসেবার সাথে যুক্ত হবার জন্য বারসিক’র পরামর্শ অনুযায়ি উঠোন বৈঠক ও সরকারি সেবাদানকারী অফিসে যোগাযোগ করছেন। এভাবেই গুচ্ছগ্রামের নারী-পুরুষরা স্বপ্ন দেখছেন সকলের সাথে সমানভাবে মর্যাদার সাথে বাঁচার জন্য।