বর্ষার টক মিষ্টি ফল লটকন
সাতক্ষীরা থেকে এস.এম নাহিদ হাসান
বর্ষা এলেই মনে পড়ে লটকনে কথা। টকমিষ্টি এই ফলটি মানুষের কাছে খুব প্রিয়। বর্ষার মৌসুমে দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্রি হতে দেখা যায় ফলটি। তেমনি আমাদের সাতক্ষীরার বাজারেও লটকন বিক্রি হচ্ছে। মানুষের চাহিদাও কমতি নেই।
এক সময় লটকন অপ্রচলিত ফল হিসেবে থাকলেও মানুষের কাছে চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে এর বাণিজ্যিকীকরণের সীমা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশের নরসিংদী জেলাতে সবচেয়ে বেশি এ ফলের চাষ হয়। এ ছাড়াও বর্তমানে সিলেট, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাজীপুর জেলাতেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লটকনের চাষ হচ্ছে। সম্প্রতি বিদেশেও ফলটি রফতানি করা হচ্ছে।
প্রচুর পরিমাণ সমৃদ্ধ ফলটিতে ভিটামিন ‘ বি’ রয়েছে। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ এবং আমিষ, লৌহ, খনিজ পদার্থ। লটকন খেলে সহজেই বমি বমি ভাব দূর হয়। মুখের রুচি বাড়িয়ে দেয়। এটি মানসিক চাপ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। লটকন গাছের শুকনো পাতার গুঁড়ো ডায়রিয়া সারতে উপকারি। এ গাছের ছাল ও পাতা চর্মরোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। লটকন ফলের বীজ গনোরিয়া রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত। স্থানীয়ভাবে লটকনের বেশ কয়েকটি নাম রয়েছে; যেমন- ডুবি, বুবি, কানাইজু, লটকা, লটকাউ, ইত্যাদি। তবে অধিকংশ মানুষ এটাকে লটকন নামে চিনে থাকে।
লটকন গাছে সাধারণত মাচ মাসের দিকে ফুল আসে। ফল পরিপক্ক হতে প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগে। লটকন বৃক্ষ সাধারণত ৯-১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর কা- বেটে এবং উপরাংশ ঝোপালো হয়। পুং এবং স্ত্রী গাছ আলাদা যাতে আলাদা ধরণের হলুদ ফুল হয়, উভয় রকম ফুলই সুগন্ধি হয়। এ ফলের আকার দুই থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার হয়, যা খুব সুন্দর ভাবে থোকায় থোকায় ধরে থাকে। লটকন ফলের রঙ হলুদ হয়। ফলে ভিতর ২-৫টি বীজ হয়, বীজের গায়ে রসালো অংশ থাকে, যা জাতভেদে টক বা টকমিষ্টি স্বাদের হয়। এই ফলটি শুধু শুধু খাওয়া যায় আবার অনেকে জ্যাম তৈরি করে খেয়ে থাকে। লটকন ফলের ছাল থেকে রঙ তৈরি করা হয় যা রেশম সুতা রাঙাতে ব্যবহার করা হয়। ছায়াযুক্ত স্থানেই এ গাছ ভাল জন্মে।
মুক্তকোষ ইউকিপিডিয়া মতে, লটকনের (বৈজ্ঞানিক নাম Baccaurea motleyana)। এ ছাড়াও লটকন এলাকাভেদে নানা নামে পরিচিত, যেমন- Rambai, Rambi, Mafai-farang, Lamkhae, Ra mai ইত্যাদি। আমাদের দেশে সম্প্রতি এ ফলটি বাণ্যিজিকভাবে চাষ করা হলেও অনেক আগে থেকে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে লটকন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হয়।
সাতক্ষীরা শহরের ফল বিক্রেতা আহমেদ বলেন, “আমাদের এলাকায় লটকন ফল তেমন পাওয়া যায় না। আমরা ঢাকা থেকে এ ফল এনে বাজারে বিক্রি করি। প্রতি কেজি ফল ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করছি। মানুষের কাছে এ ফলের চাহিদা অনেক।”