প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বপ্ন পূরণ করতে চাই
সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল
“মোবাইল সার্ভিসিং এর প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা স্বনির্ভর হতে চাই। কাজটি ভালোভাবে শিখে একটি ছোটখাট দোকান দিতে পারলে আমাদের দৈনিক আয়ের পথ তৈরি হবে। আমরা বাড়িতে বেকার ছিলাম। বারসিক থেকে আমাদের এই ট্রেনিং নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। বেকারত্ব ঘুচিয়ে পারিবারিক আয় বৃদ্ধি করে স্বাবলম্বী হয়ে স্বপ্ন পূরণ করতে চাই”। আলাপচারিতায় কথাগুলো জানালেন প্রশিক্ষণার্থী জুবায়ের রহমান (২০)।
দেশে দিন দিন বেকারত্ব বাড়ছে। মানুষ বিভিন্ন ধরনের ডিগ্্রী অর্জন করে চাকরির জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। জুটছে না আশানুরূপ কর্মক্ষেত্র। দক্ষ জনশক্তি ব্যতিত কোনভাবেই দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। বর্তমানে দেশ-বিদেশের শ্রমবাজারের বাস্তব চাহিদার প্রেক্ষিতে নানাধরনের কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণে সরকারি ও বেসরকারি নানাবিধ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
তারই ধারবাহিকতায় বিএমজেড ও নেট্জ পার্টনারশীপ ফর ডেভেলপমেন্ট এন্ড জাষ্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা শক্তিসালীকরণ (পরিবেশ) প্রকল্প শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলাধীন কর্মএলাকায় প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী সদস্য/ সদস্যের সন্তান-সন্ততিদের আগ্রহ ও বর্তমান বাজার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। মোটরসাইকেল মেরামত ও সার্ভিসিং, মটর সাইকেল মেরামত ও সার্ভিসিং এবং সেলাই প্রশিক্ষণ এই তিন ট্রেডে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ, বুড়িগোয়ালিনী, পদ্মপুকুর ও গাবুরা ইউনিয়নের মোট ২৭ জন প্রশিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। গুণগতভাবে অপেক্ষাকৃত তুলনামূল উত্তম স্থানীয় কারিগরি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রশিক্ষণার্থীরা এই হাতে কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন।
এই বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ বাজারের মাষ্টার মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার এর প্রশিক্ষক আল-আমীন বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে ৩ জন শিক্ষার্থী মোবাইল সার্ভিসিং শিখছে। তিন জনকে খুব যতœ সহকারে দায়িত্ব নিয়ে হাতে কলমে শিখিয়ে দিচ্ছি। শিক্ষার্থীদের আগ্রহ আছে তারা ভালোভাবে শিখতে পারবে। ছেলেগুলো তাদের স্বপ্ন পূরণ করে পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারবে।’
উল্লেখ্য, ১৬০০ দরিদ্র পরিবারকে জলবায়ু সহিষ্ণু ও বহুমূখী আয় বুদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জ্ঞান ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে দক্ষতা বৃদ্ধি করা, সরকারি ও বেসরকারি সেবাসমূহ, তথ্য ও সম্পদে প্রবেশাধিকার এবং জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা, জলবায়ু ন্যায্যতা ও অধিকার রক্ষায় আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের নীতি প্রণেতা এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে সংলাপ এসকল লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে বারসিক ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় কর্মএলাকায় বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা শক্তিসালীকরণ (পরিবেশ) প্রকল্প করে। প্রকল্পের ধারবাহিক কাজের অংশ হিসেবে প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী সদস্য বা সদস্যের সন্তান-সন্ততিদের আগ্রহ ও চাহিদার প্রেক্ষিতে উক্ত ভোকেশনাল কার্যক্রম শুরু করা হয়। ১ জুলাই ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া মোটরসাইকেল মেরামত ও সার্ভিসিং ৬ মাস মটর সাইকেল মেরামত ও সার্ভিসিং ৪ মাস এবং সেলাই প্রশিক্ষণ চলবে ৩ মাস। প্রশিক্ষার্থীরা যাতে করে সফলভাবে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে নিজেদের স্বপ্ন পুরণ করে পারিবারিক আয়ের সাথে যুক্ত হতে পারে সেজন্য বারসিক থেকে নিয়মিত যোগাযোগও মনিটরিং ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হয়।
প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে পারিবারিক পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে ঘুচবে বেকারত্বের অভিশাপ। স্বপ্রতিষ্ঠিত হতে পারলে একদিকে যেমন সামাজিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে অপরদিকে তেমনি সমাজ ও দেশ উন্নত হবে।