ছেলেটাকে উচ্চ শিক্ষিত করতে চাই
শ্যামনগর থেকে মহিরঞ্জন মন্ডল
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ইউনিয়নে কামালকাটি গ্রামে উত্তরা রানীর স্বামী ও এক ছেলেসহ তিন জনের সংসার। স্বামী অসুস্থ্ এবং ছেলে বেকার ভবঘুরে হয়ে সময় কাটায়। কোন আয় রোজগার করে না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হিসেবে তাই সংসার চালাতে উত্তরা রানীকে দিনমজুরি কাজ বেছে নিতে হয়। কনেক মন্ডল (১৮) উত্তরা রানী ও পিতা অজিত মন্ডলের একমাত্র সন্তান। অতিদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া কনেক জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত ও অভাব অনটনের মধ্য মিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। এখন সে অনার্স ভর্তির প্রস্তুতি নিয়েছে।
পড়ালেখার পাশাপাশি সে নানারকমের ছোট ছোট আয়মূলক কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখে। করোনা মহামারি ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময়ে যাতে করে ছেলেটা খারাপের দিকে না যায় সে চিন্তা করে পিতামাতা দুজনেরই।
উত্তরা রানী বারসিক পরিবেশ প্রকল্পের একজন অংশগ্রহণকারী হওয়ার পর তিনি তার বেকার ছেলেকে কাজের মধ্যে রাখার জন্য আয়বর্ধকমূলক কাজ হিসাবে ক্ষুদ্র চায়ের ব্যবসার জন্য পরিকল্পনা করেন। বারসিক পরিবেশ প্রকল্পের মাধ্যমে তাকে ১ম ধাপে চায়ের ব্যবসার জন্য প্রয়জনীয় উপকরণ সহযোগিতা করা হয়। বাড়ির সামনে একটি ছোট দোকানে চা বিক্রির কাজটির মূল দায়িত্ব দেওয়া হয় ছেলেকে। সকাল সন্ধ্যা পড়ালেখার পাশপাশি দোকানে সময় দেন এজন্য বিক্রি বেড়ে গেছে। পারিবারিকভাবে কিছুটা হলেও আয়ের পথ তৈরি হয়েছে। ছেলের পাশাপাশি উত্তরা রানী নিজেও দোকানটি পরিচালনা করেন।
এ প্রসঙ্গে উত্তরা রানী বলেন, “আমার ছেলের বেকার জীবনেরও অবসান ঘটেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যে সময়টি তার ছেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করতো সেই সময়টা এখন সে তার ছোট্টো চায়ের দোকানে কাটায়।’ উত্তরা রানির পরিবার আগের চেয়ে এখন অনেক ভালোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, “বারসিক সংস্থার জন্নি আমার ছালেডা খারাপ বন্ধু বান্ধবের হাত থেকে রেহাই পাইয়ে দোকানে বসাতে পারিচি। আমার দোকান থেকে ভালো আয় ইনকাম হচ্ছে। বারসিক সংস্থার কাছে আমি চীরো ঋণী।’
উত্তরা রানীর একদিকে যেমন পাবিারিক আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে তেমনি নিজের ছেলেটাকে আয়ত্বের মধ্যে রেখে পড়ালেখার দিকে মনোনিবেশ করতে পেরেছেন। দোকানের মধ্য থেকে আয় করে ও দিনমজুরী দিয়ে ছেলেটাকে উচ্চ শিক্ষিত করতে চান তিনি।