বরেন্দ্রের মাটিতে মিষ্টি কমলা ও মালটা চাষ
রাজশাহী থেকে মিজানুর রহমান
দেশের বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর তানোর উপজেলায় কিছুদিন আগেও মালটা ও মিষ্টি কমলা চাষ ছিলো অসম্ভব একটি স্বপ্নের মতো। এ অসম্ভবকে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সহায়তায় সহজেই সম্প্রসারিত করেছে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী। তার দেখাদেখি মিষ্টি কমলা উৎপাদন খরচ কম এবং লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় অনেকেই বাড়ির আঙিনায় রোপণ করছেন কমলার চারা।
জানা যায়, আমদানি করা ভারতীয় মালটার চেয়ে এখানকার উৎপাদিত মাল্টা উৎকৃষ্ট ও সুস্বাদু এবং অন্য সব মৌসুমি ফলের চেয়ে এটি লাভের ব্যাপকতা বেশি। উপজেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অফিসের তথ্যমতে, সাংসদ ফারুক চৌধুরী কমলা ও মাল্টা চাষের নমুনাস্বরূপ ২০১৩ সালে ২ বিঘা জমিতে মিশ্র ফল বাগানের মধ্যে চাষ শুরু করেন। যার ফল ভোগ করতে শুরু করেছেন তিনি। এছাড়াও সাংসদের এ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে গত বছর উপজেলার লালপুর গ্রামের মোসলেম আলী দেড় বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করেন।
কলমা ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না জানান, সাংসদ ফারুক চৌধুরীর শুধু কলমা চাষ নয়। তার শতশত বিঘা জমিতে মিশ্র ফল বাগান রয়েছে। চলতি বছরে প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে ব্যাপক আকারে কমলা ও মালটা চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাংসদ। এজন্য তিনি স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসসহ বিভিন্ন স্থানের কাছে সব ধরনের পরামর্শ নিচ্ছেন এবং চারা রোপণের চিন্তাভাবনা করতে দেখা যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, সাংসদের বাগানের কমলা ও মালটার স্বাদ নিয়ে প্রথমে ভয় ছিলো। কিন্তু পাকার পর দেখা গেছে এখানকার মালটা সুস্বাদু। তাছাড়া পাকার পরও অনেক দিন রেখে খাওয়া যায়। নষ্ট হয় না এবং স্বাদও ঠিক থাকে।
স্থানীয় এমপির কমলা চাষে সফলতা দেখে উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের সুইডেন প্রবাসী হাসানুজ্জামান মুন। তিনি এক যুগ আগে সখের বসে যশোহর থেকে একটি কমলা গাছ কিনে বাড়ি উঠানে লাগিয়ে ছিলেন। গত দুই বছর ধরে প্রচুর পরিমাণে কমলা ধরছে গাছটিতে। শুধু রঙ নয়, খেতেও সুস্বাদ মিষ্টি। গাছেটিতে কমলা দেখে স্থানীয় কৃষিবিদদের ধারণা বরেন্দ্র অঞ্চলের পোড়া মাটিতে কমলা চাষের উজ্জ্বল সম্ভবনা আছে। এনিয়ে কমলা চাষী হাসানুজ্জামান মুন জানান, গাছে কমলা ধরা দেখে বেশ উচ্ছ্বাসিত তারা। আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার ইচ্ছে আছে তাদের।
এ উপজেলায় কয়েক বছরের মধ্যে এই রকম ৭০ থেকে ৮০টি পরিবার ২ থেকে ৩টি করে কমলার গাছ রোপণ করেছেন। এদের অনেকের গাছে ফলও ধরতে শুরু করেছে। অনেকের গাছে রঙিন কমলা শোভা পাচ্ছে। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার শফিকুল ইসলাম জানান, সাংসদের কমলার গাছগুলোর উচ্চতা এবং কমলার ধরন দেখে মনে হচ্ছে এগুলো থাই কমলা। তবে এই মাটিতে এত বেশি কমলা ধরছে যা আগামীতে পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলে কমলা চাষের আগাম বার্তা দিচ্ছে। সর্বোপরি অধিক হারে মালটা চাষের সম্প্রসরণ করা গেলে বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় অর্থের সাশ্রয় হবে।
সাংসদ সহ স্থানীয় কৃষকদের মাল্টা চাষে আগ্রহী ও সফলতা দেখে চলতি বছর কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো.হামিদুর রহমার সরেজমির এসে মাল্টা বাগান পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ কৃষি কর্মকর্তা আরো জানান, ডাক্তারি মতে মালটা হচ্ছে ভিটামিন ’সি’ সমৃদ্ধ ফল। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ’সি’ খাওয়া প্রয়োজন।