চলনবিলে মাছ ধরার ‘বাউত উৎসব’

মো. মনিরুজ্জামান ফারুক, ভাঙ্গুড়া (পাবনা) থেকে

মৎস্যসমৃদ্ধ চলনবিল। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাছ উৎপাদিত হয় বলে চলনবিলকে মৎস্য ভান্ডার বলা হয়। তবে দিন দিন কমে আসছে বৃহত্তর চলনবিলের পরিধি। কৃষি জমিতে কীটনাশক প্রয়োগসহ নানা কারণে হারিয়ে যাচ্ছে দেশিয় প্রজাতির মাছের উৎপাদনও।

Photo Bhangoora Pabna 11-11-2018 Barciknews 1

তারপরও চলনবিলের রয়েছে নানা ঐতিহ্য। বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ চলনবিলের জলরাশি আকৃষ্ট করে সবাইকে। প্রতিবছর বিল থেকে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সময় এখানে শুরু হয় মাছ ধরার ‘বাউত উৎসব’। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য বাউত উৎসবে শুধু জেলেরা নয় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সখ করে পলো (মাছ ধরার ফাঁদ) নিয়ে নেমে পড়েন পানিতে। বিলে পলো দিয়ে এক সাথে শত, শত মানুষ মাছ শিকারে করেন। রুই, কাতলা, জাপানি, ষোল, বোয়াল, মিনার কার্প, টাকি প্রভৃতি মাছ পাওয়া যায়। দূর দূরান্ত থেকে আসা শিশু-কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ নানা বয়সী মানুষ অংশ নেয় তাতে। সৌখিন মৎস্য শিকারিদের এক মিলন মেলায় পরিণত হয় পুরো বিল এলাকা। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য চলনবিলাঞ্চল ছাড়া অন্য কোথাও যেন দেখার উপায় নেই।

মাছ ধরার জন্য মাইকে ঘোষণা দিয়ে নির্ধারিত দিনে নির্দিষ্ট বিলে পলো দিয়ে মাছ শিকার এ অঞ্চলের অনেক পুরনো প্রথা। শুধু পলো নয়। বাদাই, খেওয়া জাল, কারেন্ট জাল, ঠেলাজাল প্রভুতি মাছ ধরার ফাঁদ ব্যবহার করে মাছ শিকার করা হয়। এসকল মাছ শিকারিদেরকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘বাউত’।

Photo Bhangoora Pabna 11-11-2018 Barciknews 2

গত শনিবার চলনবিল অধ্যুষিত চাটমোহর উপজেলার খলিসাগাড়ি বিলে মাছ ধরার বাউত উৎসব হয়। সেখানে ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুরসহ আশপাশের উপজেলার শত, শত সৌখিন মৎস্য শিকারি সাইকেল, মোটরসাইকেল, নছিমন করিমন যোগে এসে জমায়েত হয় বিল পাড়ে। এদিন বিলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে তাদের মাছ শিকার। মাছ শিকার করতে আসা কয়েকজন মৎস্য শিকারি বলেন, প্রতিবছর আমরা এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করি। বিলে পলো নামার কথা শুনেই আমরা ছুটে এসেছি মাছ ধরতে।’ তারা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। তবে মাছ কম পেলেও উৎসবের আনন্দে কমতি ছিলো না তাদের।

 

happy wheels 2

Comments