লোকসংস্কৃতি ও লোকউৎসবের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে

বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে মোঃ শহিদুল ইসলাম
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কিংবা জন্মের আগে বা পরেও মানুষ সংস্বকৃতির নানা ধাপে ধাপে এগিয়ে চলে। মানুষের জীবনযাপন, আচার-আচরণ, সামাজিক ও ধর্মীয় বিশ^াসসহ আনন্দ, হাসি-কান্না সবকিছুর সাথে সংস্কৃতি জড়িত। সংস্কৃতি একটি চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলে। এর কোন শেষ নেই, শুধু রূপান্তর হয় মাত্র। বিভিন্ন দেশকাল এবং সমাজ ও অঞ্চল ভেদে সংস্কৃতির নানা রূপ ও বৈচিত্র্য দেখা যায়। এগুলোই লোকসংসংস্কৃতির অংশ। মানুষের বেঁচে থাকার এবং টিকিয়ে থাকাসহ জীবনের সকল পড়তে পড়তে আঞ্চলিক সংস্কৃতিগুলো মানুষকে টিকিয়ে রাখতে এবং উজ্জীবিত করতে সহায়তা করে যুগের পর পর যুগ। এগুলোই কোন জাতিকে স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের মূলধারায় টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে। লোকসংস্কৃতিগুলোই মানুষ লোকউৎসবের মধ্যে দিয়ে নানাভাবে প্রদর্শন করে থাকে। এর ফলে নানা প্রজন্মের মধ্যে এই সংস্কৃতির প্রচলন এবং জানাবোঝার দিকগুলো তৈরি হয়ে থাকে। লোকসংস্কৃতির উৎস আদি এবং বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে সেতুবন্ধন করতে সহাযতা করে। যুগে যুগে গ্রাম বাংলার লোকসংস্কৃতি ও লোক উৎসবগুলো তাঁর নিজস্ব জাতিস্বত্ত¦ার দিকগুলো উন্মোচন করে একটি দেশ এবং জাতিকে মহিমান্বিত করে। তাই লোকসংস্কৃতি এবং লোকউৎসবগুলো টিকিয়ে রাখা এবং এগুলো চর্চায় অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন গ্রামের প্রবীণজনগোষ্ঠীসহ, লেখক, শিক্ষক গবেষক এবং উন্নয়নবিদরা।


সম্প্রতি রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের বড়কুঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়েছে লোকসংস্কৃতি ও লোকউৎসব। উক্ত উৎসবে গ্রামের মানুষ তাঁর নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এবং লোকজ্ঞানগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেচেন। দিনব্যাপী উক্ত অনুষ্ঠানের একটি বড় আয়োজন ছিলো লোকায়ত কুষিচর্চার দিকগুলো তুলে ধরা। নারীর হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী দক্ষতায় পূর্ণ হাতের কাজগুলো প্রদর্শনসহ মৃৎশিল্পের নানা উপকরণগুলো সেখনে স্থান পেয়েছিলো। বিভিন্ন ধরনের পিঠাপুলি, নানা জাতের অচাষকৃত উদ্ভিদবৈচিত্র্যগুলোও প্রদর্শন করেন, যা তাঁদেও জীবন এবং জীবীকার সাথে জড়িত। একইসাথে দিনব্যাপী লোকক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোর আয়াজন করা হয়। বরেন্দ্র অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতি গম্বীরার আয়োজন করা হয়।


বারনই লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদের আয়োজনে এবং উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও ৮নং বড়গাছি উনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় উক্ত লোকসংস্কৃতি ও লোকউৎসবে লোকসংস্কৃতি ও লোকউ’সব বিষয়ে নবীন-প্রবীণ আলোচনা ও মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়। এতে এলাকার নির্বাচিত প্রতিনিধিসহ, কৃষক-কৃষাণী, শিক্ষক, গবেষক, উন্নয়নকর্মীগণ তাঁদের অনুভূতি এবং চিন্তাগুলো তুলে ধরেন। বারনই লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদের সভাপ্রধান জুয়েল আহমেদ বলেন, ‘লোকসংস্কৃতি আামদের জীবনেরই অংশ, এগুলো রক্ষা করা দরকার।’ বড়গাছি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ শাহাদৎ হোসাইন সাগর বলেন, ‘এমন অনুষ্ঠানগুলো করলে নবীনরা জানতে পারে আমাদের কি ছিলো, নিজের সংস্কৃতিগুলো রক্ষায় তারাও এগিয়ে আসবে।’


বারসিকের গবেষক ও আঞ্চলিক সমন্বয়কারি বলেন, ‘ভৌগোলিকভাবে বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষের লোকসংস্কৃতির মধ্যে ভিন্নতা এবং আলাদা বৈচিত্র্য আছে, যা এই অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবীকাসহ বাস্তব পরিস্থির মধ্যেই সেগুলো সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘উন্নয়ন এবং সংস্কৃতি অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত, শুধু আর্থিক উন্নয়ন নয়, মানসিক এবং সংস্কৃতির উন্নয়নই একটি জাতির ভিত আরো বেশি মজবুত করে।’ নারী নেত্রী- মোছা: রহিমা খাতুন বলেন, ‘নারীর উনন্নয়নে সংস্কৃতি অনেক বেশি ভূমিকা পালন করতে পারে। নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে তাই সংস্কৃতির উন্নয়ন দরকার।’
অনুষ্ঠানের আরো উপস্থিত ছিলেন কবিরাজ করিম উদ্দিন, তরুণ নেত্রী তহুরা খাতুন লিলিসহ এলাকার নানান পেশার মানুষ।

happy wheels 2

Comments