ঐতিহ্যবাহী সিদ্ধাবাড়ি মেলায় হাজারো মানুষের ঢল
আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সিদ্ধাবাড়ি মেলা। হিন্দু ধর্মাম্বলীদের উদ্যোগে প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ মাসে এই মেলাটি শুরু হয় এবং এক মাসব্যাপী চলে। সিংগাইর উপজেলার সাহরাইল এলাকায় ঠিক কবে থেকে এই মেলার স‚ত্রপাত তার সঠিক ইতিহাস জানে না কেউ। তবে আয়োজক কমিটি জানান, এ মেলাটি ৩০০ থেকে ৪০০ বছর যাবত উদযাপিত হয়ে আসছে।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শুরুর হয়েছে সাহরাইল সিদ্ধাবাড়ি মেলা। মেলার সেই ঐতিহ্য আর চোখে পড়ছে না। চোখে পড়ছে না সেই টমটম গাড়ির টম টম শব্দ, পুতুল নাচের রঙ্গ-তমাশা আর বাঁশি বাদকের সেই বাঁশির সুর। এছাড়াও মেলায় সার্কাস, পুতুল নাচ, যাত্রার আয়োজন করা হয়। এই মেলায় নাগরদোলা, রিং খেলাসহ অন্যান্য খেলার সমাহর হয়। বসে হাজারো রকমের ব্যবহার্য জিনিসপত্রের দোকান, বাহারী রসনাদায়ক খাদ্য সামগ্রীর সমাহার। এছাড়া বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী মেলায় বেচা-বিক্রি হয়।
রাঁধুনীর মসলার কাঁচামাল ধনিয়া, শুয়াজ, জৈন, তরিতরকারী কাটাকাটির দা-বটি, বাচ্চাদের খেলনা সামগ্রী, বেতের তৈরি ধামা-কাঠা এখানে পাওয়া যায়। বেদে বহরের চমৎকার আয়োজন মেলাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। মিষ্টির দোকানগুলোও থাকে লোকজনে ভরপ‚র। রসগোল্লা, চমচম, কালো জাম, মোহনভোগসহ বাহারি জিলেপীর মিষ্টির দোকানের গলি থাকে পরিপ‚র্ণ। সেই সাথে মৌমাছিদের সরব আনাগোনা আর ভন ভন শব্দ তরঙ্গ মেলাকে ভিন্ন এক মাত্রার যোগান দেয়। গ্রামীণ মৃৎশিল্প ও কারুপণ্যের বিক্রিও মেলার আরেক আকর্ষণ। সবচেয়ে মজার দৃশ্য সাধু-সন্যাসীদের এরিয়া। বিভিন্ন বয়ষ্ক সাধুদের সাথে ক্ষুদে সাধুদের সমাগম হয় সাহরাইল মেলায়। এই মেলাটি অনেক জনপ্রিয় মেলা হিসেবে বিবেচিত। কারণ এই মেলাটি অনেক দ‚র-দ‚রান্ত থেকে লোক এসে উপভোগ করে।
এক সময় অনেকেই সারাবছর এলাকার মানুষজন পথ চেয়ে থাকতেন কখন মেলা শুরু হবে। মেলার প্রস্তুতি স্বরূপ সারাবছর টাকা জমাতেন। সেই টাকা দিয়ে বাহারি রকম খেলনা, নাগার দোলায় উঠা, পুতুল নাচ দেখেতেই ব্যয় করতেন অনেকেই কিন্তু এই ঐতিহ্যবাহী মেলা আজ বিলুপ্তি প্রায়।
একটা সময় কয়েক মাইল দ‚র থেকেও মেলার রেস টের পাওয়া যেত। নাগর দোলার কর কর শব্দে মনকে ভীষণভাবে দোলা দিতো আর এই মেলার পুতুল নাচ ছোট –বড় সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে যেন ছিলো মহাউৎসব।
হারিয়ে যাচ্ছে এই ঐতিহ্যবাহী মেলা এর কারণ জানতে চাইলে আয়োজক কমিটির এক কর্মকর্তা জানান, এক সময় এক মাসব্যাপী এই মেলার অনুমতি পাওয়া যেত কিন্তু এখন আর সেই অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তাছাড়া রমজান মাস চলছে যে জন্য মেলার বর্তমান চিত্র এমন বলে জানান তিনি।
মেলা সামাজিক আনন্দ-বিনোদন ও ধর্মীয় উৎসবের কারণে একটি স্থানে অনেক মানুষ একত্রিত হয়। মেলা বিভিন্ন রকমের হতে পারে। মেলার সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্টীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির যোগাযোগ থাকে। বাংলার এই সংস্কৃতিতে থাকে সব ধর্মের মানুষের সংস্কৃতির সমন্বয় । মেলাকে ঘিরে গ্রামীণ জীবনে আসে প্রাণচাঞ্চল্য।