জলবায়ু পরিবর্তনে হারাচ্ছি আমাদের পেশা, খাদ্য ও সংষ্কৃতি
রাজশাহী থেকে উত্তম কুমার
‘এখন আমাদের বেশির ভাগ মানুষ অন্যর জমিতে কাজ করে বা অন্য কোথাও শ্রমিকের কাজ করে। আগে নিজেরা ফসল চাষাবাদ করতাম। আবার প্রকৃতিতে তেমন খাবার পাই না। অনেক আমাদের সহরায় (নবান্ন উৎসব) আয়োজন করতে সোনাকাঠি, ঝিঙ্গাশাইল, মাগুর শাইল ধান লাগত এখন সে ধান আর নেই। তাই বাধ্য হয়ে এখন যে ধান পাই তা দিয়ে সহরায় উৎসব পালন করতে হয়।’
উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার কাজিপাড়া গ্রামের মতিরাম সরেন (৫৬)। বরেন্দ্র অঞ্চল তথা রাজশাহীর তানোর উপজেলা খরাপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। দিন দিন খরা ও তীব্র তাপদাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এর ফলে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রান্তিক মানুষেরা। বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো দখল দূষণে আদিবাসীরা হারাচ্ছেন তাঁদের পেশা, খাদ্য ও সংষ্কৃতি। আদিবাসী সম্প্রদায় এমনিতেই প্রান্তিক। এর মধ্য আদিবাসী নারীরা আরো বেশি ঝুঁকির মধ্য পড়ছেন জলবায়ুগত সংকটের কারণে। তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা না রাখলেও জলবায়ু পরিবর্তনে সবচে’ বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তারাই!
আজ ২৩ নভেম্বর তানোর উপজেলার কাজিপাড়া গ্রামের আদিবাসীরা ঝলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাঁদের যে ক্ষতিগুলো হচ্ছে তা থেকে সুরক্ষার দাবিতে ঘণ্টাব্যাপি মানববন্ধন করেন। কচুয়া-কাজিপাড়া কৃষক সংগঠন ও বারসিক’র আয়োজনে উক্ত মানববন্ধনে প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশগ্রহণকারী নারীরা তাঁদের বিভিন্ন দাবি উপস্থাপন করেন। উক্ত মানববন্ধনে ছবি হে¤্রম (৩৫) বলেন, “আমরা যে খাস পুকুরগুলোতে আগে গোসল করতাম সেখানে এখন মাছ চাষ হয়। গোসল করলে শরীরে অনেক রোগ হয় চুলকানি হয়। আবার তীব্র তাপের কারণে কাজ করতে কষ্ট হয় শরীরে ঘাঁ ও চুলকানি হয়।’
জলবায়ু পরিবর্তননের ফলে এ অঞ্চলের পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নামছে যার ফলে টিউবয়েলগুলোতে তেমন পানি উঠে না। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করতে অনেক দূর যেতে হয়। এ বিষয়ে রোজিনা মার্ডি (৩৭) বলেন, “আমরা গরীব মানুষ আমাদের বাড়িতে টিউবয়েল নেই। পানি আনতে আমাদের অনেক দূর যেতে হয়। আমরা জলবায়ু পরিবর্তন বুঝিনা কিন্তু অনেক ক্ষতি হয় আমাদের। আমরা জলবায়ুর ক্ষতিপূরণ চাই।’