বরেন্দ্রে হাসছে সোনালি ধান
মিজানুর রহমান, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি :
বরেন্দ্র ভূমিখ্যাত রাজশাহীর তানোর উপজেলায় বোরো ফসলের মাঠে এখন পাকা ধানের সোনালি হাসি। উজ্জ্বল রোদে সেই আলো ঝলমল করে উঠছে। অনেক মাঠেই কৃষক কাস্তে নিয়ে ধান কাটার উৎসবে নেমে পড়েছেন। আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূল থাকায় এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এতে কৃষকের মন ভরছে ঠিকই। কিন্তু তা বেশিক্ষণ ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, উৎপাদন খরচ উঠবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। তবে কৃষক যাতে ধানের ন্যায্য মূল্য পায়, তা নিশ্চিত করতে সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
মাঠপর্যায়ে খবর নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা করা হলেও কৃষকরা ধান বিক্রি করে আশানুরূপ দাম পাবে কি না তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন। কারণ সব ধরনের কৃষিপণ্যের দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষক যদি উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পায় তাহলে সমস্যা নেই। কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে গিয়ে বাজারে পণ্যের দাম বেশি পড়লেও সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষ দুর্ভোগে পড়বে। সে দিকটাও সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় রাখতে হবে।
তানোর পৌরশহরের চাপড়া এলাকার কৃষক সাইদুর রহমান জানান, তার প্রতি বিঘায় ১২ হাজার ৫০ টাকা খরচ হয়েছে। তিনি এবার ১০ বিঘা জমি চাষ করেছেন। তার হিসাবে, এক বিঘা জমিতে বীজ বাবদ খরচ হয়েছে চারশ ৫০ টাকা, হাল চাষ আটশ টাকা, ধানের চারা লাগানো বাবদ আটশ টাকা, পানি সেচ দেয়া বাবদ এক হাজার দু’শ টাকা, সার বাবদ তিন হাজার, কীটনাশক বাবদ দুই হাজার টাকা, পরিচর্যা বাবদ এক হাজার টাকা এবং ধান কাটা বাবদ খরচ হয়েছে দুই হাজার আটশ’ টাকা।
তিনি বলেন, ‘যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে আশানুরূপ ধানের ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসাবে বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২২ মণ ধান হতে পারে। আর প্রকৃতি যদি বিরূপ আচরণ করে সে ক্ষেত্রে কী হবে তা সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন।’ কালনা গ্রামের কৃষক আলম আহম্মেদ বলেন, ‘এখন যে অবস্থা চাষ করে করে লাভ নেই। এখনো নতুন ধানের দাম জানছি না। এবার ফলন ভালোই হয়েছে। কিন্তু কৃষকরা দাম পাবে কি না কে জানে। আমাদের এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে পুরোদমে শুরু হবে।’
প্রতিমণ মিনিকেট সাতশ থেকে সাতশ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া অন্যান্য জাতের ধান কাটতে এখনও এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। কাঙ্খিত দাম না পেলে ঋণের বোঝা বাড়বে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। কৃষকরা জানিয়েছেন, এবার প্রতি বিঘা বোরো চাষে ১১ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে এবার উৎপাদন ভালো হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে চিন্তা এখনো কাটেনি। পাশাপাশি শ্রমিক সঙ্কট রয়েছে। এখনো অন্যান্য স্থান থেকে শ্রমিকরা এসে পৌঁছায়নি। আবার শ্রমিক পেলেও দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত মজুরি। কৃষকের সবকিছু নির্ভর করবে ধানের বাজার মূল্যের ওপর। ভালো ফলনের পাশাপাশি বাজার মূল্য সন্তোষজনক হলে উৎপাদন খরচ উঠবে। আর তা না হলে কৃষকরা লোকসানে পড়বেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম জানান, চলতি বোরো মৌসুমে দুইটি পৌরসভাসহ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ৮ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমান আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধানের সার্বিক অবস্থা ভালো রয়েছে। তাই এ বছরও ধানের ভালো ফলন হবে। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে পুরো উপজেলায় ধান কাটা শুরু হবে।