এমন ‘মানবতার দেয়াল’ দীর্ঘ ও প্রশস্থ হোক

চাটমোহর, পাবনা থেকে ইকবাল কবীর রনজু

পাবনার চাটমোহরের রেলবাজার এলাকার দুই যুবকের পরিকল্পনার ফসল ‘মানবতার দেয়াল’ সাড়া ফেলছে চাটমোহরে। তারা যে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন তা হলো, তারা চাটমোহর রেলওয়ে ষ্টেশনে পোশাকাদী রাখার একটি আলনা স্থাপন করেছেন। আলনার উপরে ঝোলানো হয়েছে একটি সাইনবোর্ড, যাতে লেখা আছে ‘এই পোশাক শুধু মাত্র গরিবদের মাঝে বিতরণ করা হয়। মানবতার সেবায় আমরা এগিয়ে আসি এবং গরিবের পাশে দাঁড়াই।’

alna-1

সমাজের অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল ব্যক্তিরা ও বিত্তবানরা তাদের পুরোনা পোষাক ফেলে না দিয়ে এ আলনায় ঝুলিয়ে রেখে যাচ্ছেন আর দুঃস্থ গরিব মানুষেরা এ আলনা থেকে তাদের পছন্দমতো পোষাকটি বেছে নিয়ে যাচ্ছেন। গত ২৪ এপ্রিল তারা মানবতার দেয়াল নামক এ কর্মকান্ডের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে চাটমোহর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ আব্দুল হামিদ মাষ্টার, পাবনা-৩ এলাকার সাবেক এমপি আলহাজ¦ কেএম আনোয়ারুল ইসলামসহ অত্র এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

alna-2
পাবনার চাটমোহরের মূলগ্রাম ইউনিয়নের মহরমখালী গ্রামের মৃত আরশেদ আলীর ছেলে হারুনুর রশীদ ও তার ভাগ্নে চাটমোহর পৌর সদরের নাড়িকেল পাড়া মহল্লার আলহাজ¦ সুজন বিশ্বাস উদ্যোগ নিয়ে তৈরী করেছেন এ মানবতার দেয়াল। আলাপকালে হারুন বলেন, ‘আমরা অনেক সময়ই রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত দরিদ্র শ্রমিক ও অসহায় মানুষকে কাপড়ের অভাবে খালি গায়ে কাজ করতে দেখি। তাদের রোদে পুড়তে দেখি। এটি আমাদের ব্যথিত করে। আমরা স্বচ্ছলরা কত দামী দামী পোষাক পরিধান করি অথচ আমাদের চোখের সামনে কত জনকে পোষাকের অভাবে খালি গায়ে থাকতে দেখি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটু চেষ্টা করলেই অন্য এক মা, বোন এর ইজ্জত রক্ষার্থে একটি শাড়ি দান করতে পারি। একটা পুরোনো কাপর দান করেও তাদের সহায়তা করতে পারি। এমন চিন্তা থেকে আমরা এ উদ্যোগ নেই। যথেষ্ট সাড়া ও পাচ্ছি। ধনীরা স্বচ্ছলরা এখানে শার্ট, প্যান্ট, লুঙ্গি, শাড়ি, সোয়েটার, গামছাসহ বিভিন্ন পোষাক রেখে যাচ্ছেন। গরিব মা বোন ভাই যখন এখান থেকে বেছে একটি কাপড় নিয়ে হাসি মুখে বাড়ি ফিরছেন তখন এমন দৃশ্য আমাদের দায়িত্ববোধ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।’

alna-3
আলহাজ¦ সুজন বিশ্বাস বলেন, ‘আমি ও আমার মামা দুজনই এতিম। এতিমদের প্রতি তাই আমাদের দূর্বলতাও বেশি। প্রথমে এতিমদের কথা চিন্তা করলেও পরে সবার জন্য ভাবতে থাকি। ঢাকার মহাখালী ব্রীজের পাশে এমন উদ্যোগ দেখেছিলাম। এটি আমাদের অনুপ্রাণীত করে। তাই আমরা এমন একটা মানবতার দেয়াল তৈরির কথা ভাবি। চাটমোহর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার (ইনচার্জ)মহিউল ইসলামকে বিষয়টি জানালে তিনি ও সহায়তার আশ্বাস দেন। এ ব্যাপারে যাদের সাথে কথা বলেছি তারা সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সকলের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এবং আমাদের এ কার্যক্রম দেখে অন্যরা উৎসাহিত হলে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমন উদ্যোগ নেয়া হলে অনেক বেশি সংখ্যক দুঃস্থ অসহায় গরিব মানুষ উপকৃত হবে।’

alna-4
চাটমোহর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ মাষ্টার, সাবেক এমপি কেএম আনোয়ারুল ইসলাম, বিশিষ্ট সাংবাদিক আব্দুল লতিফ রনজু, রেলওয়ে ষ্টেশনমাষ্টার (ইনচার্জ) মহিউল ইসলাম, ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামসহ অনেকেই যুবকদের এমন কর্মকান্ডের প্রশংসা করেন। এমন মানবতার দেয়াল আরো দীর্ঘ ও প্রশস্থ হোক, ছড়িয়ে পরুক দেশ ব্যাপী এমন আশাবাদ সবার।

happy wheels 2

Comments