বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী পিংকি আক্তারের পাশে দাঁড়ান

নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়

সুস্থ সবল একজন মানুষের চাইতে মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষের বোধ শক্তি থাকে কম। তারা সহজেই কোনো কিছু বুঝতে পারেনা। কথাও বলে তাদের খেয়াল খুশি মতো। কোনো কাজেও তাদের আগ্রহ থাকেনা। এমনই একজন কিশোরী তিয়শ্রী গ্রামের পিংকি আক্তার। সে শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও মানসিকভাবে অসুস্থ। সে একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। দরিদ্র পিতা মাতার ঘরে জন্ম গ্রহণ করে সে বারো বছর আগে। তার আরো তিনটি ভাই বোন রয়েছে। বাবা কাঠ কাটার কাজ করেন। দল বেঁধে কাঠ কেটে টালি দিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। আবার কখনো কারো ফরমায়েশি কাজ করে দেন। ছয় জনের সংসার কোনো রকমে চলে।

যে দিন তার বাবা কাঠ কাটতে যেতে পারেনা সেদিন সবাইকে না খেয়ে থাকতে হয়। পিংকির মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পান তা নিয়ে এসে ছেলে মেয়েদের খেতে দেন। কখনো জঙ্গল থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে কখনো আবার নদীর পাড়ের অচাষকৃত উদ্ভিদ কুড়িয়ে এনে বাজারে বিক্রি করতে পাঠায়। আবার নিজেরাও খায়। গেরস্ত বাড়ির সব্জীর জমি থেকে সব্জী তুলে দিয়ে কিছু সব্জী মুজুরি হিসেবে পেলে তাও নিয়ে আসেন তার মা বাড়িতে। এই অভাবের সংসারে পিংকি যেন দুশ্চিন্তার কালো ছায়া।

জন্মের পর থেকে মোটামুটি ভালোই ছিল সে। স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠেছে। তখন কেউ বুঝতে পারেনি পিংকির সমস্যা কোথায়। আস্তে আস্তে যখন সে বড় হতে লাগলো তখনই তার মাঝে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। কারো সাথে কথা বলে না। শরীর দূর্বল। নিজের কাজ নিজে করতে পারে না। কেউ কিছু বললে প্রচ- রাগ হয় তার। তখনও পরিবারে কেউ বুঝতে পারেনি যে, সে মানসিকভাবে অসুস্থ।

IMG_20190526_114312_0
যখন পিংকির মা দেখলেন, সে কোনো কিছু মনে রাখতে পারেনা। যেমন ভাত খেয়েছে কিনা বা কারো নাম তখনই টের পেলেন যে সে স্বাভাবিক নয়। অনেক কষ্টে কিছু টাকা যোগাড় করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। ডাক্তার বললেন, চিকিৎসা করলে সুস্থ হবে। কিন্তু প্রচুর টাকার প্রয়োজন। অভাবের সংসারে যেখানে ঠিক মতো খাবার জোটেনা সেখানে তার চিকিৎসার খরচ চালানো অসাধ্য। নিরাশ হয়ে বাবা মা ফিরে এলেন।

বাড়িতে ফিরে অনেক কবিরাজের কাছেও নিয়ে গেলেন। কিন্তু পিংকি আর স্বাভাবিক হলো না। এখন সে এখন জয়শীদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। পড়ালেখা করানো মূল উদ্যেশ্য নয়। ডাক্তার বলে দিয়েছেন অনেক মানুষের মধ্যে তাকে রাখতে হবে। তাছাড়া বিদ্যালয়ে গেলে উপবৃত্তির টাকা পাওয়া যায়। এই উপবৃত্তির টাকা দিয়ে সংসারের কিছু চাহিদা পূরণ করা যায়। পিংকি বেশির ভাগ সময় চুপ চাপ থাকে। নিজের ইচ্ছে না হলে কারো সাথে তেমন কথা বলেনা। কেউ নিজে থেকে কিছু জানতে চাইলেও উত্তর দেয়না।

প্রতিবেশিরা তাকে নিয়ে মজা করে। তখন আরো সে বেশি রেগে যায়। রেগে গিয়ে ঘরের জিসিন পত্র ভাঙচুর করে। নয়তো বা তাদেরকে ধরে মারতে শুরু করে। রাগ সামলাতে তার মাকে অনেক বেগ পেতে হয়। অনেক সময় কাউকে মারতে না পারলে নিজের শরীরে নিজেই আঘাত করে। তার শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন আছে। অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় আছেন তার মা বাবা। এর তো কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তাদের মৃত্যুর পর কি হবে এই ভেবে দিশেহারা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য’র সাথে প্রতিবন্ধি ভাতার জন্যও যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা করে দিতে পারেননি। বারসিক’র পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে পিংকির বিষয়ে কথা হয়েছে। শিক্ষকরা বলেছেন প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে যে ভাতা দেয়া হয়, সেটি এখনো তাদের প্রতিষ্ঠানে দেয়া হয়নি। ভবিষ্যতে সুযোগ এলে পিংকিকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদেও এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারাও আশ্বাস দিয়েছেন। দেখা যাক অসহায় পিংকির ভাগ্যে কি জোটে।

happy wheels 2

Comments