পরোপকারী শেখ ওয়াহেদ আলীর গ্রামীণ জীবন
মানিকগঞ্জ থেকে মো. নজরুল ইসলাম
”স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল, ভালো থাকুক মানবকূল” জীবমাত্রই তার ক্ষুদা, আহার, নিদ্রা, নিস্কাশন ও মৈথুন থাকবেই। কোনজীব এগুলো ছাড়া বাচঁতে পারেনা এটাই চিরায়ত সত্য। জগতের প্রত্যেক প্রাণীরই কোননা কোন অসুখ বিসুখ থাকে। আমরা সব কিছু জানিনা ও তাদের ভাষা বুঝিনা। জগতের শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ, দাপটের সহিত শাসন করছে এই বিশ^কে। মহাবীর মানুষও আজ করোনা নামক প্রাণঘাতি মহামারি দ্বারা আক্রান্ত। কোন ভাবেই তাকে বধ করা যাচ্ছে না, তবে আমরা অবশ্যই বিজয়ী হব।
আমাদের দেশের সংবিধান মতে চিকিৎসা মৌলিক চাহিদার অন্যতম একটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে মৌলিক মানবাধিকারের অন্যতম হলো চিকিৎসা। এই চিকিৎসার রয়েছে নানা রকমফের, রয়েছে অসংখ্য শ্রেণীবিভাজন। সহজ কথায় ধনী, গরিব ও বড়লোকের চিকিৎসা সেবা একরকমনয়। দেশের প্রত্যেক জেলা, উপজেলা ও কমিউনিটি পর্যায়ে সরকারি হাসপাতাল থাকলেও এখনো প্রান্তিকজনগোষ্ঠির এক বিশাল অংশ সরকারি চিকিৎসা সেবার বাইরে। বেসরকারি চিকিৎসা অতিব ব্যয়বহুল ও বাণিজ্যিক হওয়ার কারণে সেখানেও প্রবেশাধিকার নেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর। এহেন পরিস্থিতিতে গ্রাম-শহরের এক বিশাল প্রান্তিক জনগোষ্ঠী দারস্থ হয়, গ্রাম্য কবিরাজ, হোমিওপ্যথিক ও এলাপ্যাথিক দাতব্য চিকিৎসালয়ে।
মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলাধীন সিংজুরী ইউনিয়নের বীরসিংজুরী গ্রামের কৃতিসন্তান (অব:) সেনাকর্মকর্তা একজন প্রতাপশালী মানবতাবাদী গ্রাম্য কবিরাজ ওয়াহেদ আলী(৬১)। তিনি বলেন, “আমি একা ভালো থাকতে চাই না সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে চাই, সুখে থাকতে চাই। করলাম। তাদের আদর্শে উজ্জিবিত হয়ে জীবনে এক পয়সাও ঘুষ খাইনি, সৎভাবে এখনো জীবনযাপন করছি। আমার ছোট বেলা থৈকেই একটি স্বপ্ন ছিল- নিজের বাড়িতে একটি খামার করবো। সেখানে দৈনন্দিন জীবনে যা লাগে সবই আমি নিজে উৎপাদন করব শুধু তাই নয় দেশীয় পদ্বতিতে সার ও বিষমুক্ত সবজি, ধান, মাছ চাষকরব এবং প্রতিবেশীদের হক দিয়ে মিলেমিশে থাকবো। চাকরিতে থাকা অবস্থায় হোমিওপ্যথিক কোর্স করেছিলাম এবং আযুর্বেদ শাস্ত্রের উপর কিঞ্চিত ধারনা পেয়েছি বিভিন্ন বইপুস্তক পড়ে। গ্রামের গরিব ও প্রান্তিক মানুষকে বিনাপয়সায় ক্ষেত্রবিশেষ উপকরণ মূল্য নিয়ে এই সেবা প্রদান করবো।”
নিজস্ব দৃঢ়তা ও পরিশ্রমে তার সেই স্বপ্ন আক পূর্ণ হয়েছে। তিনি তার পৈত্রিক ভিটাতেই অবসরের বেশির ভাগ টাকা দিয়ে বাড়ির আকার বড় করেছেন এবং জমি কিনেছেন। বর্তমানে দুই একর জায়গার মধ্যে তার বাড়ি, চারপাশে আরো দুই একর চাষের জমি রয়েছে। বাড়িতে একটি পুকুর আছে এক পাশে আছে গোসলের জন্য জায়গা। আরেক পাশে আছে ধানীজমি- সেখানে সারাবছর ধান ও মাছচাষ করেন। বাড়িতে আছে ১০টি গরু, হাসঁ, মুরগী, ছাগল, কবুতর সবই আছে; গরু ও হাস-মুরগীর বিষ্ঠাদিয়ে তৈরী করেছেন বায়োগ্যাস। উচ্ছিষ্টগুলো জমিতে ও পুকুরে দেন। যখন প্রচন্ড খড়া থাকে, বৃষ্টি থাকেনা তখন গভির নলকুপ দিয়ে পানি উত্তেলন করেন এবং অতিরিক্ত পানি পুকুরে জমা থাকে, বৃষ্টির পানিও পুকুরে জমা থাকে- অতিরিক্ত পানি নালা দিয়ে পুকুরের বাইরে পাশের ধানী জমিতে প্রয়োজনমত দেন। বৃষ্টির দিনে তিনি পানি করেন, পুকুরের জমানো পানি, পকুরে ধান ও মাছের জন্য প্রযোজনমত রেখে পুকুরের বাইরের জমিতে সেচের মাধ্যমে দিয়ে থাকেন, এই প্রক্রিয়ায় তার অর্থ ও জ¦ালানি উভয়ই সাশ্রয়ী হয়। পুকুরের পার দিয়ে আছে লাউগাছের জাংলাসহ বিভিন্ন ফল ও ফুলগাছ। তারপাশেই আছে ওষুধিগাছের বাগান। স্থানীয় ওষুধী গাছের পাশাপাশি আছে মাদ্রাজীকচু, এলাচি, বীরজরন, পিপুলগাছ, পিপুল জাঙ্গি গাছ, বিলম্বী, জামরুলসহ ৮৬ প্রকারের ওষুধিগাছ।
পাশাপাশি তিনি হোমিও চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। মানুষ প্রতিদিনই আসে তার কাছে- চিকিৎসা নিতে। ধনী রোগীর সংখ্যা কম; তিনি বলেন, “আমিও চাই যারা পয়সার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারেনা তারাই আমার কাছে আসুক। স্বালম্বীদের কাছে হোমিও ওষুধ দিয়ে থাকি এবং সামান্য বিনিময় নেই। আর বাকিদের কবিরাজিমতে চিকিৎসা দেই কোন পয়সা নেইনা, অনেকেই উপকার পেলে পয়সা নিয়ে আসলেও আমিতাদেরকে বলি পয়সা দিয়েফল ও সবজিকিনে খাও। বেশি বেশি মৌসুমীফল খেতে হবে। সবুজশাক-সবজি খেতে হবে।”
বীর সিংজুরী গ্রামের উন্নয়নকর্মী মো. জামাল মিয়া বলেন, “আমরা ওয়াহেদ আলীর কাছ থেকে বিনা পয়সায় অনেক ওষুধ পাই। আমরা উপকৃত হয়েছি, আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।” বাউল আক্কাস বলেন, “আমরা অহিদ নামে চিনি সে আমার বন্ধু এক সাথে লেখাপড়া করেছি, ছোট বেলা থেকেই ওয়াহেদ আলী পরোপকারি, মানবতাবাদি। আমি বলি এভাবে বিনাপয়সায় বেশিদিন এই সেবা দেওয়া সম্ভব নয়, সামান্য অর্থ কড়ি নিতে হবে এবং আমরা যারা চিকিৎসা নেই তাদেরও উচিত উপকরণ মূল্যটা দেয়া উচিত। আমি চাই তার প্রচার ও প্রসার হোক।” ওয়াহেদ আলী বলেন, “আমি যশ ও খ্যাতির আশা করিনা তবে আমার এই সেবামুলক কাজে যদি সরকারি বা বেসরকারি কোনপুরুস্কার ও স্বাীকৃতি পেতাম তাহলে স্মৃতি হিসাবে রাখতাম ও পরবর্তী প্রজন্ম এটি জানতে পারতো। এছাড়া সরকারে কাছে আমার চাওয়ার তেমন কিছু নেই।”
মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য এভাবে তিনি আজীবন মানুষের সেবা করে যেতে চান। সৃষ্টির সকল জীব নিরোগ থাকুক এই প্রত্যাশা তিনি সবসময় করেন।